লক্ষ্মীপুর থেকে চুরি হওয়া একটি ট্রাকের খন্ডিত অংশ যশোর বকচর থেকে উদ্ধার - Jashore Tribune

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

a1

Sunday, March 2, 2025

লক্ষ্মীপুর থেকে চুরি হওয়া একটি ট্রাকের খন্ডিত অংশ যশোর বকচর থেকে উদ্ধার



লক্ষীপুর থেকে চুরি করে আনা একটি ট্রাকের খোঁজে যশোরের বকচরে অভিযান চালানো হয়। এখান থেকে গাড়ির কয়েকটি খন্ড উদ্ধার হয়েছে। ১ ও ২ মার্চ লক্ষীপুর সদর থানা পুলিশ ও যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের টিম যৌথ অভিযান চালিয়ে ট্রাকটি কাটা অবস্থায় বকচর বকুলতার রাজ কুমারের পুরাতন পার্টসের দোকানের সামনে থেকে উদ্ধার করে কয়েকজন গ্যারেজ মালিক এবং চোরাই গাড়ি বেচাকেনা করা লোকজনকে সাথে নিয়ে তারা অবাধে এ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযানিক টিমের দাবি। অভিযানের খবর পেয়ে চোরাই সিন্ডিকেট সদস্য রাজ কুমার পালিয়েছে।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরাতন লোহা ও মোটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির বর্তমান কমিটির কয়েকজন সরাসরি এই চোরাই ও বিকিকিনি সিন্ডিকেটে জড়িত। তাদের কয়েকজন পুলিশি তদন্ত ও অভিযান ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি ট্রাক চোর চক্রের অন্যতম হোতা রাজ কুমারকে সেভ করার চেষ্টাও করেছেন। এ নিয়ে বকচর এলাকায় ক্ষোভ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে সিন্ডিকেটের লোকজনের সাথে বাকবিতন্ডা হয়েছে।

তথ্য মিলেছে, লক্ষীপুর সদর উপজেলা এলাকার মামুন আহমেদ নামে ব্যবসায়ীর একটি ট্রাক চুরি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। এ নিয়ে ১ মার্চ লক্ষীপুর থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা হয়। আর লক্ষীপুর থানা পুলিশের এসআই হুমায়ুন কবীর সোর্সের মাধ্যমে ও গোয়েন্দা তথ্যে জানতে পারেন চুরি হওয়া ট্রাকটি যশোরের বকচরে চোরাই ট্রাক বিকিকিনি ও কাটা সিন্ডিকেটে রয়েছে। আর ওই তথ্যে ১ মার্চ রাতে বকচরে অভিযান পরিচালনা করেন। যশোর কোতোয়ালি থানাকে অবহিত করে এবং এসআই আলমগীর হোসেনকে সাথে নিয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরপর বকচরের চৌধুরী বাড়ির অদুরে বকুলতলায় রাজ কুমারের দোকানের সামনে ওই চোরাই ট্রাকের কয়েক খন্ড পাওয়া যায়। কেবল কয়েকটি খন্ড করার পরই অভিযান চলে। এসময় খন্ড কেবিন ফেলে পালিয়ে যায় রাজ কুমারসহ চক্রের লোকজন। আর অদুরে পূজা মন্ডপের পাশে ওই চোরাই ট্রাকের চ্যাসিজসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ উদ্ধার হয়।

এদিকে চোরাই ট্রাক উদ্ধারের সময় পুরাতন লোহা ও মোটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির একজন পুলিশকে ভিন্ন ব্যাখা দেয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি রাজ কুমারকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এসময় একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় কয়েকজনের সাথে বাকবিতন্ডা হয় ওই চোরাই সিন্ডিকেট সদস্যদের।

গোয়েন্দা শাখা ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে তথ্য মিলেছে, বছর কয়েক আগে বকচর হুঁশতলা এলাকার ফারুক, ইঞ্জিন মিস্ত্রী ফারুক, মাসুদ, মুড়লি এলাকার কালু ড্রাইভার, চৌধুরী পাড়া এলাকার কানা ইজাজ, গোপালগঞ্জ জেলার কাঠির বাজার এলাকার মাহফুজ শেখ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস, ট্রাক, পিকআপ, প্রাইভেট কার ও কাভার্ড ভ্যান চুরি করে যশোরে আনতেন। আর এগুলো দেয়া হত শহরের বকচর এলাকার কয়েকটি চিহ্নিত গ্যারেজে। এ চক্রের ওই সদস্যরা প্রত্যেকেই গাড়ি চালানোই পারদর্শী ছিলেন। যশোর ছাড়াও বিভিন্ন শহরে গ্যারেজ মালিকের সাথে ছিল এদের সুসম্পর্ক। অন্য জেলা থেকে চুরি করে আনা ট্রাক যশোরে এনে গ্যারেজে ফেলে খন্ডখন্ড করে বিক্রি করত ওই চক্রটি। চোরাই ট্রাক সিন্ডিকেটে বকচর গ্যারেজ কাঠু ওরফে আশরাফুল আলম কাঠু, গ্যারেজ কামরুলসহ অনেকের নাম রয়েছে। এখন আর ওই চক্রটির বেশিরভাগই মাঠে নেই। এখন এই সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়েছে নতুন মুখ। এই নতুন সিন্ডিকেট চিহ্নিত কয়েকটি গ্যারেজে ফেলে চোরাই গাড়ি কেটে অথবা যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করছে। আবার রাতারাতি একটি গাড়ির যন্ত্রাংশ অবৈধভাবে অন্য গাড়িতে সংযোজন এবং রঙ পরিবর্তন করার কাজটিও করছে চক্রটি।

পুলিশি অভিযান ও তদন্ত থেকে তথ্য মিলেছে, চোরাই ও পুরোনো গাড়ি বিকিকিনি ও কাটা নয়া সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে সমিতির সদস্যদের কেউ কেউ রয়েছেন। নেপথ্যে থেকে অর্থলগ্নি করে চোরাই ও পুরোনো গাড়ি বিকিকিনি কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন কয়েকজন।

চোরাই কোনো গাড়ি ধরা খেলে সমিতির কয়েকজন গাড়ির মালিককে ম্যানেজ করে চোরদের সরিয়ে দেন। গাড়ি কিংবা যন্ত্রাংশ সব উদ্ধার করার ব্যবস্থা করে দেবেন বলেও আশ্বাস দেন। চোরাই ও পুরোনো একটি গাড়ি দেড় লাখ থেকে ২ লাখ টাকায় কিনে নেয়া হয়। গাড়িগুলো বেশিরভাগ কাটা হয় ভোরের দিকে। অনেক গাড়ির মাঝখানে রাখা হয়, যাতে ওই চোরাই গাড়িটি বাইরের লোক চিনতে না পারে। গাড়ি কাটার পর যন্ত্রাংশ সব বিক্রি করা হয়। চলমান সিন্ডিকেটের নেপথ্যের নায়কদের দ্রুত আটক ও আইনের আওতায় আানার দাবি উঠেছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল থেকেই। আর পলাতক রাজ কুমার ও তার ভাই পার্থ কুমারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি উঠেছে।

এ ব্যাপারে যশোর কেতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ কাজী বাবুল হোসেন জানিয়েছেন, বকচর এলাকায় এ ধরনের কয়েকটি সিন্ডিকেট রয়েছে, যার তথ্য তাদের কাছেও এসেছে। লক্ষীপুরের একটি ট্রাক যশোরের সিন্ডিকেট থেকে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে ২ মার্চ। এ ব্যাপারে আরো খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিগত সময়ে বেশ কয়েকটি চোরাই গাড়ি উদ্ধারও করেছে।

এ ব্যাপারে অভিযানিক দারোগা লক্ষীপুর থানার এসআই হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, চোরাই গাড়ি বিকিকিনি সিন্ডিকেট গাড়ি কেটে আমুল পরিবর্তন করে। যশোরের বকচরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে দীর্ঘদিনের। তিনি যে চোরাই গাড়িটি উদ্ধার করেছেন তাতে সম্পৃক্ত বকচরের রাজকুমার পলাতক। তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্পৃক্ত গ্যারেজ ও অভিযুক্তদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে যশোর কেতোয়ালি থানার এসআই আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, অভিযানে তিনি লক্ষীপুরের পুলিশ টিমকে সহায়তা করেছেন। একটি চক্র ভোল পাল্টে চোরাই গাড়ি বিকিকিনি করে চলেছে, সে ব্যাপারে নজরদারি চলছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad