বেনাপোল কাস্টম হাউজের সাবেক কমিশনার, শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী এবং তার স্ত্রী ফেরদৌস সুমির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। এদিন দুদকের পক্ষে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন কমিশনের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। শুনানি শেষে বিচারক আবেদন মঞ্জুর করেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, বেলাল হোসাইন চৌধুরীর দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইসহ ঘুষ, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অনুসন্ধানকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বেলাল হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত অভিযোগসহ বিভিন্ন গোপনীয় উৎসের মাধ্যমে জানা যায়, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে দেশে ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে প্রচুর স্থাবর অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তাছাড়া তিনি তার ভাইসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডেভেলপার, রিয়েল এস্টেট কোম্পানিসহ শেয়ার বাজারে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছেন মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ অর্জিত অর্থ দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভিন্ন মাধ্যমে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করেছেন মর্মেও অনুসন্ধানকালে তথ্য পাওয়া যায়।
আবেদনে আরও বলা হয়, অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী সপরিবারে গোপনে দেশত্যাগ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধান কাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধান কার্যক্রমের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধ করা একান্ত প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৩ জুলাই বেলাল হোসাইন চৌধুরীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এনবিআরের তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে এনবিআর ও দুদকে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে ৪৮০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির কথা বলা হয়। অভিযোগে শেখ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নামীয় এক ব্যবসায়ীর মালিকানা হিসেবে মেসার্স ট্রিনা অ্যাসোসিয়েশনের কথা বলা হয়েছে।
অবৈধ সম্পদের অভিযোগে বেলাল চৌধুরীর নামে ধানমন্ডির ১৫/এ, রোড নম্বর-৪-এর ১৫ নম্বর বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অভিযোগে ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়িটি বেলাল চৌধুরীর নামে উল্লেখ করা হয়। ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িটিও বেলাল চৌধুরীর নামে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। বসুন্ধরা জি-ব্লকে ১০ কাঠা জমির ওপর ৭৫ কোটি টাকা মূল্যের ৬ তলা বাড়ি রয়েছে বেলাল চৌধুরীর।
এছাড়া বেলাল চৌধুরীর নামে যশোর এসপি অফিসের পাশে ১৫ কাঠা জমির ওপর ১৫ তলা ভবন নির্মাণ, ২ কোটি টাকা দিয়ে সিভিল সার্জন অফিসের পাশে ৩৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে ১০ তলা ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়। অন্যদিকে নোয়াখালী শহরে ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে ১০ কাঠা জমির ওপর ৬ তলা বাড়ি নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। ৪৫ নিউ ইস্কাটনে যে ফ্ল্যাটে বেলাল চৌধুরী পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সেই ফ্ল্যাটের মালিকানার সত্যতা পাওয়াগেছে।
No comments:
Post a Comment