যশোরে স্বল্প পরিসরে কাজে যোগ দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা - Jashore Tribune

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

as

a1

Sunday, August 11, 2024

যশোরে স্বল্প পরিসরে কাজে যোগ দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা

 


যশোরে স্বল্প পরিসরে কাজে যোগ দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। গতকাল রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন পদ মর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেন। তবে এসব পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা নিজেদের এবং সরকারী সম্পত্তি ও অস্ত্র গোলাবারুদের নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় প্রকাশ করেন।

তবে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বক্ষনিক ছাত্র-জনতাকে মাঠে থেকে পুলিশ প্রশাসনকে সহায়তা করার আহবান জানিয়েছেন।এদিকে স্বল্পপরিসরে পুলিশ সদস্যরা কাজে ফিরলেও তারা সবাই ছিলেন সাদা পোষাকে। সরকারী পোষাক পরিহিত অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা থানা বা ফাড়ির বাইরে বের হতে লজ্জা বোধ করছেন বলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন।

জুলাই ছাত্র-জনতার দূর্বার গণআন্দোলন এবং ৫ আগষ্ট মহাবিপ্লবের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটে। এই গণআন্দোলন প্রতিহত করতে সরকারের নির্দেশে দেশব্যাপী পুলিশ নির্বিচারে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষন করে। এর ফলে বহু ছাত্র-জনতা হতাহতের ঘটনা ঘটে। জনবিক্ষোভে বহু পুলিশ সদস্যও হতাহতের শিকার হন। দেশের প্রায় সকল বিভাগ ও জেলায় পুলিশ ছাত্র-জনতা মুখোমুখি অবস্থানের ফলে জনরোষের শিকার হন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।

বিশেষ করে বিগত ১৮ বছর ধরে সরকারী দলের লেজুরবৃত্তি এবং সরকারী দলের নেতাদের তলপিবাহকে পরিণত হওয়া পুলিশ সদস্যরা গণধিকৃত হতে শুরু করে। যার ফলে খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, মাগুরা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ি, কুষ্টিয়াসহ গোটা দক্ষিনাঞ্চলসহ সারা দেশের শত শত থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি এবং পুলিশ ক্যাম্প জনরোষের শিকার হয়েছে। বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ সদস্যদের মারপিট করে। কোন কোন থানার অস্ত্রাগার ভেঙ্গে অস্ত্র গোলাবারুদ লুট করার ঘটনাও ঘটে। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু যশোরে। এই দীর্ঘ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যশোরের পুলিশ প্রশাসন চরম ধৈয্যের পরিচয় দিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে দেননি। কোন কোন সময় শারিরিক ও মানসিক ভাবে কিছুটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেও পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নির্দেশে বিশেষ করে পুলিশ সদস্যরা ছাত্র-জনতার মুখোমুখি হননি। যার কারনে ৫ আগষ্ট বিজয়ের পর সারা দেশে থানা পুলিশ আক্রান্ত হলেও যশোরে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

বরং ছাত্র-জনতা মানবঢাল তৈরী করে পুলিশ সদস্য ও থানা এবং সকল সরকারী সম্পত্তি ও অফিস আদালতকে রক্ষা করেছেন। একই সাথে ৫ আগষ্টের পর যশোর জেলা বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিজয় পরবর্তী সহিংসতা রোধ এবং সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে মাঠে নামেন এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাসহ সকল সরকারী বেসরকারী অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সর্বোপরি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষায় নিরাপত্তা বিধানে তাদের কর্মী সমর্থকদের পালাক্রমে ডিউটির কাজে নিয়োজিত করেন। একই সাথে ৭ আগষ্ট জেলা প্রশাসক আবরাউল হাসান মজুমদার তার সভাকক্ষে সর্বদলীয় এক সভা করে জেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা ও উন্নয়নে করনীয় শীর্ষক দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যশোরের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজে ফেরার আহবান জানান। সরকারী ভাবেও পুলিশ সদস্যদের দ্রুত কাজে যোগদানের আহবান জানানো হয়। পুলিশের মাহপরিদর্শকও বার বার বার্তা দিয়ে পুলিশ সদস্যদের কাজে যোগদানের নির্দেশনা প্রদান করেন। তারপরও যশোরে পুলিশ সদস্যরা কাজে ফিরছিলেন না। সর্বশেষ গত শনিবার বিকেলে যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে উর্ধ্বত পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক যৌথ সভা করেন পুলিশ সুপার মাসুদ আলম। সেখানে অবিলম্বে মানুষের জানমাল রক্ষায় এবং জেলা ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে পুলিশ সদস্যদের মাঠে নেমে কাজ করার আহবান জানানো হয়।

এক পর্যায়ে যশোরের সকল থানার অফিসার ইনচার্জ, ফাড়ির ইনচার্জ, ক্যাম্পের ইনচার্জসহ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যরা এসপিকে আশস্ত করেন যে সকাল থেকে তারা কাজে ফিরবেন। পুলিশ সুপার কাজে ফেরা সকল পুলিশ সদস্য এবং তাদের সরকারী স্থাপনা ও অস্ত্র গোলাবারুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন। সেই কথার প্রেক্ষিতে রোববার সকাল থেকে জেলার ৯টি থানা, ৩টি পুলিশ ফাঁড়ি ও ৩০টি ক্যাম্পে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা কাজে ফিরতে শুরু করেন। তবে এসব পুলিশ সদস্যরা সাদা পোষাকে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, কাজে যোগদানকারী পুলিশ অফিসার ও সাধারণ কনেস্টবলরা পুশিশের বর্তমান পোষাক আর গায়ে জড়িয়ে জনরোষের শিকার হতে চাচ্ছেন না। গতকাল সকালে যশোর পুলিশ লাইনের মেইন গেটে পুলিশ সদস্যরা তাদের ১১ দফা দাবি পূরনের আহবান জানিয়ে ব্যানার টাঙিয়ে দেন। এই ১১ দফার অন্যতম দাবি হচ্ছে পুলিশের পোষাক পরিবর্তন, দূনীতিবাজ,সরকারী অর্থলুটপাটকারী ও ক্ষমতার অব্যবহারকারী পুলিশ অফিসারদের বিচার দাবি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ৪ জন ইন্সপেক্টর, ১০জন সাব ইন্সপেক্টর ও ২০জন এ্যাসিট্যান্ট সাবইন্সপেক্টরসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার প্রায় ১শো পুলিশ সদস্য কর্মরত আছেন।

এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত ২জন ইন্সপেক্টর, ৮জন সাব ইন্সপেক্টর ও ১০জন এ্যাসিট্যন্ট সাবইন্সপেক্টরসহ ৩৫জন পুলিশ সদস্য কাজে ফিরেছেন। যশোর ট্রাফিক বিভাগের ৩জন ইন্সপেক্টরসহ প্রায় শতাধিক সদস্য কর্মরত থাকলেও অফিসে ফিরেছেন ২৭জন। কিন্তু তারা অফিস করলেও মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন শুরু করেননি। যশোর ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রূপন কুমার সরকার জানান,সব সময় অফিস করছি। আমার অফিসে ৩জন ইন্সপেক্টর,১৮জন সাব ইন্সপেক্টর,১৩জন এ্যাসিট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টরসহ মোট ৬০জন কর্মরত আছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলমান অবস্থায় বা ৫ আগষ্টে সরকারের পদত্যাগের পরও তার কোন ছাপ যশোর ডিবি অফিসে পড়েনি। আমরা সব সময় কাজ করছি। তবে আগের মতো এখনো বাইরে অভিযান পরিচালনার মতো অবস্থায় আমরা ফিরতে পারিনি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, আমরা পুলিশের মনোবল বৃদ্ধির জন্য সার্বক্ষনিক কাজ করে যাচ্ছি। যেহেতু যশোরে পুলিশের ওপর কোন সহিংতা বা কোন সরকারী সম্পদ বা গোলাবারুদের ওপর কোন আঘাত অসেনি। তাই আমরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ছিলাম। বর্তমানে সারা দেশের পুলিশ বাহিনীর সাথে আমাদের জেলায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরাও কিছুটা শংকিত, আতঙ্কিত ছিলো। আমাদের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ যশোরের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে আমরা যশোর পুলিশে কর্মরত সকল পর্যায়ের সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি করে তাদেরকে কাজে ফেরানোর চেষ্টা করছি। আজ থেকে সীমিত পর্য়ায়ে কাজ শুরু হয়েছে। মনে করছি ২/১ দিনের মধ্যে পুলিশ প্রশাসনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।

এ বিষয়ে যশোরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি যশোরের ছাত্র-জনতাকে বার বার ধন্যবাদ দিতে চাই। তারা দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে যে ধৈয্যের পরিচয় দিয়েছে তা অবিশ^াস্য। লাখো মানুষের মিছিলে মিছিলে যখন যশোর প্রকম্পিত হচ্ছিল তখনো আমার পুলিশ সদস্যরা ছাত্র-জনতার পাশে থেকে সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা এবং সরকারী সম্পত্তি ও অফিস আদালত রক্ষার কাজে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের আগে পরে দেশের অন্য জেলায় পুলিশের ওপর যেভাবে হামলা, মারপিট, পুলিশ সদস্যদের হত্যা, অস্ত্রাগার লুট, থানায় থানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে তার দৃশ্য দেশে যশোরের পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে ।

তারা তাদের এ্যাসোসিয়েশনের ডাকে সাড়া দিয়ে কর্মবিরতি পালন শুরু করে। থানা , পুলিশ ফাড়ি ও ক্যাম্প গুলো এক প্রকারে অরক্ষিত হয়ে পড়ে। তারপরও আজ পর্যন্ত যশোরের পুলিশ বিভাগের ওপর বিক্ষুব্ধ জনতা বা কোন মিসক্রিয়েন্ট গ্রুপের পক্ষ থেকে কোন অশুভ দৃষ্টি পড়েনি। তার একটায় কারন হচ্ছে জেলা পুলিশের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সকলে মিলে পুলিশের ভেঙ্গেপড়া মনোবলকে চাঙ্গা করতে একসাথে কাজ করছি। ইতিমধ্যে আইজিপি স্যারের নির্দেশে পুলিশের বিভিন্ন পদ মর্যাদার কিছু কিছু সদস্য কাজে যোগ দিয়েছেন। ইনশাল্লাহ অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকিরাও কাজে যোগ দিবে। জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারাও রাস্তায় নামলে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad