যশোর শহরের পাঁচ নাম্বার ওয়ার্ডেযশোর স্টেডিয়ামপাড়ায় যেখানেই অপরাধ-অপকর্ম, সেখানেই মহিলা লীগনেত্রীর পুত্রের নাম!র স্টেডিয়ামপাড়া। পাড়াটিতে যেখানেই অপরাধ-অপকর্ম, সেখানেই তাঁর নাম। হুমকি-ধমকি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, মাদক, ছিনতাই ও কিশোরগ্যাং নিয়ন্ত্রণ থেকে হেন কোনো অপরাধ নেই যেখানে তাঁর নাম উঠে আসে না। এই গুণধর ব্যক্তি সাকিব ইকবাল (২০)। তিনি যশোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নওশিন সুলতানা সুমির ছেলে। পুলিশ বলছে, হত্যা টেষ্টা, মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি তিনি। অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী মায়ের প্রশ্রয়ে দিন দিনই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন সাকিব। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, হামলা চালানো, এমনকি আধিপত্যে বিস্তার করতে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণের মতো তার নিত্য অপকর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে অল্প বয়সেই তিনি এলাকাবাসীর মুখে মুখে আলোচনা- সমালোচনায়। বিভিন্ন সময়ে বেপরোয়া সাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও বিচার না হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে এলাকায় শান্তি ফেরাতে ও বিচারের দা্বিতে মহিলা লীগনেত্রীর বেপরোয়া ছেলের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নাজেহাল হওয়া এলাকাবাসী। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ৭১ জন এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষরকৃত অভিযোগটি গ্রহন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলার হোসাইন। যার অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে স্বরাষ্টমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ, মহাপুলিশ পরিদর্শক, ডিআইজি, জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন ৮টি দপ্তরে।
তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে অভিযুক্ত যুবকের মা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নওশিন সুলতানা সুমি। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় একটি চক্র রাজনীতিকভাবে উদ্শ্যেমূলকভাবে আমার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। সেটা সত্য নয়। আমার ছেলে পড়াশোনা করেন স্থানীয় একটি কলেজে। বিভিন্ন সময়ে তার রাজনীতিকভাবে মামলার আসামি থাকলেও সে জামিনে রয়েছে। স্থানীয় কুচক্রী মহল আমাদের এলাকা ছাড়ার জন্য এমন অভিযোগ করেছে। আমি রাজনীতি করলেও সেই রাজনীতির ছোঁয়া আমার সন্তানের উপর পড়তে দেয়নি।’
লিখিত অভিযোগে এলাকাবাসী উল্লেখ করেছেন, দীর্ঘদিন যাবত মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী নওশিন সুলতানা সুমির পুত্র সাকিব ইকবাল (২০) দীর্ঘদিন ধরে স্টেডিয়াম পাড়ায় পৌরহকার্স মার্কেট, স্টেডিয়াম পাড়া ও খড়কী এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, চাঁদাবাজী, মাদক ও ছিনতাই
বিভিন্ন ধরনের অপরাধ মূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তাদের নামে হত্যা প্রচেষ্টার মামলাসহ একাধিক রয়েছে। গত ১৬ জুন রাত ১২ টার দিকে
মনিরুল ইসলাম মুন্না নামে একজন কলেজ শিক্ষককে যশোর পৌরহকার্স মার্কেটের সামনে হেঁটে যাওয়ার সময় সন্ত সাকিব ইকবারের নেতৃত্বে আশিক ইকবল, ইব্রাহিম সহ ১০/১২ জনের একটা সন্ত্রাসী দল ছিনতায় ও হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে চাপাতি ও দেশিয় অস্ত্র বার্মিজ চাকু দিয়ে প্রচন্ড আঘাত করে, এতে তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষত বিক্ষত হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এ সময় চিৎকার করিলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসলে উক্ত সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এর পর পরিবারের লোকজন মুমূর্ষু অবস্থায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে এবং তার অবস্থা এখনো সংকটপূর্ণ। এ ঘটনায় মনিরুল ইসলাম স্ত্রী ফারজানা তানজাম(৩৮) বাদী হয়ে ৪ জনের নামসহ মামলা করেছেন। মামলায় তারা পলাতক রয়েছেন।
সন্ত্রাসী সাকিব ইকবাল নেতৃেত্বে এক সন্ত্রাসী বাহিনী প্রতিদিন ৪ থেকে ৫টি মটর সাইকেলসহ বহিরাগত সন্ত্রাসীরা গভীর রাত পর্যন্ত পৌরহকার্স মার্কেট, পৌরপার্ক গেট, স্টেডিয়াম পাড়া, খড়কী এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। ২৫ জুন রাতে মদ্যপান ও মাভাল অবস্থায় যশোর শামসুল হুদা-স্টেডিয়াম- এর নাইট গার্ড রয়েল হোসেনকে বেদম প্রহার ও অমানসিক নির্যাতন করে। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে গত ১৬ জানুয়ারী সাবেক মেয়র রেন্টু চাকলাদার স্টেডিয়াম পাড়ায় গরীব, অসহায়, ও দুঃস্থদের মাঝে কম্বল বিতরন করে । কম্বল বিতরণ করা শেষে সন্ত্রাসী সাকিব ইকবাল, ও ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ১০/১২ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী আজিজুল ইসলাম নামের একজন দিন মজুরকে ব্যাপকভাবে প্রহার ও অমানবিক নির্যাতন করে এবং এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি প্রদান করে । গত ৮ মে যশোর স্টেডিয়াম মার্কেটের বিশিষ্ট তৌফিক ইকবলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদার দাবীতে হামলা চালায়। নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় সাকিব ইকবলের নেতৃত্বে ১০/১২
জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। যা সি সি ক্যামেরায় উক্ত ঘটনা সংরক্ষিত আছে। এছাড়া যশোর স্টেডিয়াম পাড়ায় ব্যবসায়ী ও যশোর স্টেডিয়াম পাড়া কমিউনিটি পুলিশিং কার্যকারী কমিটির সদস্য আতিয়ার রহমানের কাছে চাঁদাদাবী করে এবং বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসী সাকিব ইকবাল তাকে হত্যার হুমকি প্রদান করে। যশোর স্টেডিয়াম পাড়ার সাবেক অবসর প্রাপ্ত হিসাব কর্মকর্তা নুরুল হককে সন্ত্রাসী আশিক ইকবাল হত্যার হুমকি প্রদান করে।
গেল বছরের ১০ জানুয়ারি যশোর পৌরসভার অনুমতি ও যশোর কোতয়ালী থানায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম নির্দেশে যশোর ৫নং ওয়ার্ড স্টেডিয়াম পাড়া কমিউনিটি পুলিশিং কর্তৃক ২টি বিট দেয়া হয় বেপরোয়া মটরসাইকেলের গতি কমানো জন্য। এ ঘটনায় উক্ত বিট প্রদান করলে সন্ত্রাসী সাকিব ইকবাল ও তার মা নওশিন সুলতানা সুমির নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী সেই বিট ভেঙ্গে দেয় (ঘটনাটি সি সি টিভির ক্যামেরায় ফুটেজ সংরক্ষিত আছে) উক্ত ঘটনা যশোর স্টেডিয়াম পাড়া কমিউনিটি পুলিশিং এর কার্যকারী সভাপতি এ্যাড: বদরুদ্ধোজা বান্দা তখন ওসি তাজুল ইসলামকে জানাই। সঙ্গে সঙ্গে কোতয়ালী থানার পুলিশ এসে সন্ত্রাসী আশিক ও শিন
সুলতানা সুমিকে থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীকালে কোতয়ালী থানার ওসি তদন্ত মনিরুজ্জামানের কাছে ক্ষমা চেয়ে ও মুছলেখা দিয়ে থানা থেকে ছাড়া পায়। এছাড়াও যশোর স্টেডিয়াম পাড়ায় নাইড ডিউটির কাজে নিয়োজিত কাউসার আলী ও শামিম হোসেনকে (মিস্ত্রী) সন্ত্রাসী সাফির ইকবাল তার নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটা সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদেরকে ব্যাপক প্রহারও নির্যাতন করে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি প্রদান। স্টেডিয়াম পাড়ার কমিউনিটি পুলিশিং কার্যকারী কমিটির সাধারন সম্পাদক হায়াতুজ্জামানকে বেশ কয়েক বার মোটর সাইকেল দিয়ে হত্যার প্রচেষ্টা চালায় সন্ত্রাসী সাকিব ইকবালের নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। দীর্ঘ দিন যাবৎ উক্ত সন্ত্রাসী সাকিব ইকবাল ও তার মা নওশিন সুলতানা সুমির রাজনৈতিক ক্ষমতাকে হাতিয়ার করে স্টেডিয়াম পাড়ায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, ছিনতাই, মাদকসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাজের সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন স্টেডিয়াম পাড়াসহ আশেপাশের এলাকায় সাধারন নিরীহ মানুষ অত্যাচারিত হয়ে আসছে। কেউ মুখ খুললেই তাকে হত্যার হুমকী দিয়ে এলাকা ছাড়া করার কথা বলে। পৌরপার্কের অধিকাংশ ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে
এই সাকিব ও তার গ্যাং জড়িত। বিষয়গুলো ও ঘটনা সমূহ সঠিক তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান এলাকাবাসী।
এই বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, এলাকাবাসী একটি স্মারকলিপি বা অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করবে পুলিশ। কেউ এলাকায় শান্তি বিনষ্ট বা বিশৃঙ্খলা করছে পুলিশ কাউকে ছাড় দিবে না। যিনি যে রাজনীতি বা ব্যক্তির ছত্রছায়াতে থাকুক না কেন।’
No comments:
Post a Comment