প্রমত্তা পদ্মার বুকে জেগে ওঠা স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে এক বছর তিন মাস আগে। অনেক কাজ বাকি থাকায় ট্রেন চলাচল করা সম্ভব হয়নি এতদিনে। অবশেষে সেই দীর্ঘ অপেক্ষারও অবসান হতে চলছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার স্বপ্নের পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। সকাল ১০টায় মাওয়া রেল স্টেশনে পদ্মা সেতু দিয়ে রেল যোগাযোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ ফরিদপুরের মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষিত আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হবে।
ঢাকা-যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার পথের পুরো কাজ শেষ না হওয়ায় এই দফায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনের পর ট্রেনে চড়ে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। পরে সেখানে এক সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন সরকারপ্রধান।
উদ্বোধনের এক সপ্তাহ পর বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ সম্পন্ন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। পুরো রেলপথটি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের রেল যোগাযোগ সহজ হবে।
রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুরুতে তিনটি স্টেশনে ট্রেন থামার ব্যবস্থা থাকছে। এগুলো হচ্ছে মাওয়া, পদ্মা (জাজিরা) ও শিবচর। মুন্সীগঞ্জের নিমতলা স্টেশনটিও চালুর চেষ্টা চলছে।
১৭২ কিলোমিটার রেলপথের ৮২ কিলোমিটারের প্রথম সেশনটির উদ্বোধনকে ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মাওয়া স্টেশনের পাশে সুধী সমাবেশস্থলে প্যান্ডেল তৈরিতে চলছে দেড় শতাধিক শ্রমিকের নিরলস কর্মযজ্ঞ।
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সবকটি রেলস্টেশন এরই মধ্যে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। সমাবেশস্থল থেকে শুরু করে উদ্বোধনী ট্রেনটিও সাজানো শেষ হবে আজকের মধ্যেই।
মাওয়া স্টেশনের প্রকৌশলী আবদুর রহমান বলেন, সব কাজ মোটামুটি শেষ। এখন শুধু ফিনিশিং চলছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল সংযোগ হচ্ছে। খুবই আনন্দিত আমরা। দেশের বৃহত্তম একটি প্রকল্প এটি। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য নতুন একটি দিগন্ত। এটা আমাদের প্রকৌশলীদের কাছেও অনেক বড় স্বপ্নের।
ইতোমধ্যে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন কমলাপুর-গেন্ডারিয়া-ভাঙ্গা জংশন পরিদর্শন করেছেন। সবকিছু ইতিবাচক করে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে রেলমন্ত্রীর এই পরিদর্শন কর্মসূচি বলছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলমন্ত্রী জানান, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশটি মঙ্গলবার ১০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অংশের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। তবে পুরো যশোর পর্যন্ত প্রকল্পের বাকি অংশ ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, কমলাপুর স্টেশন থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু পেরিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানো হবে। এজন্য চীন থেকে কেনা নতুন সাতটি কোচের সমন্বয়ে একটি বিশেষ ট্রেন প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত তিনটি অংশে রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মেইন লাইন, ঢাকা-গেণ্ডারিয়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার ডাবল লাইন, লুপ, সাইডিং ও ওয়াই-কানেকশসসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণের কাজ করছে ঠিকাদার চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি)।
এদিকে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলার খবরে উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। আগে ফরিদপুরবাসীর ঢাকায় যাতায়াতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগত। ট্রেন চালু হলে দুই ঘণ্টায় ঢাকায় যাতায়াত করা যাবে।
পদ্মা সেতু দিয়ে যেসব ট্রেন চলবে তার মধ্যে রয়েছে, খুলনা-ঢাকা রুটের দুটি আন্তঃনগর ট্রেন, সুন্দরবন ও চিত্রা, ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস বর্তমান রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচল করবে।
এছাড়া ঢাকা-কলকাতা রুটের আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসও রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় ঢুকবে।
No comments:
Post a Comment