যশোরের শার্শা উপজেলার বেলতলা আম বাজার। প্রতি বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমে আমের ব্যাপক বেচাকেনা হলেও প্রতিটা আমের গোডাউনে রাসায়নিক কেমিক্যাল (ইন্ডিয়ান স্প্রে Tagpon) দিয়ে আম পাকানোর উৎসব চলছে।
কৃত্রিম উপায়ে আমের গায়ে পাকা রং তৈরি করা হচ্ছে। আর এসব রাসায়নিক কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম খেয়ে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে সাধারণ ভোক্তারা।
সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায় , শার্শা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আম সংরক্ষণ ও বাজারজাত করণের দিন ধার্য করা হয় গোপালভোগ গবিন্দভোগ বুম্বাই সহ স্থানীয় জাতের আম ৫ই মে।
আর হিমসাগর আম সংরক্ষণের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১০ই মে এবং কোন প্রকার কার্বাইড ও রাসায়নিক কেমিক্যাল স্প্রে দিয়ে আম পাকানো যাবে না, এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু আম ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় নির্দেশনা অমান্য করে কৃত্রিম উপায়ে আম পাকিয়ে বাজারজাত করছে।
এতে করে আমের প্রকৃত স্বাদ এবং মান নষ্ট হচ্ছে, একই সাথে ভোক্তারা ব্যাপক ভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। কেমিক্যাল স্প্রেরে দিয়ে পাকানো আম খেয়ে প্রকৃত আমের স্বাদ ভূলে গেছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস তথ্য মতে, যশোর তথা দক্ষিণাঞ্চলের বাগআঁচড়া বেলতলা বাজারে বিক্রিয়কৃত আমের সুনাম রয়েছে দেশ এবং বিদেশে। কিন্তু কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানোর মহোৎসবের কারণে সেই সুনাম আজ নষ্ট হতে চলেছে।
বিদেশে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এই খাত থেকে প্রতিবছর অনেক টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে, এতে অর্থনৈতিক ভাবে দেশ লাভবান হয়। এবছর বিশ মুক্ত আম সরবরাহ না করা গেলে বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছুটা অনিশ্চিতার মুখে পড়তে পারে। তাই সচেতন মহলের দাবি অচিরেই বাজার মনিটরিং করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।সরজমিনে দেখা যায়, মোঃ জিনারুল বেপারী, জালাল বেপারী, ও কিরণ বেপারী সহ অনেক ব্যাপারী রাসায়নিক কেমিক্যাল স্প্রে (Tagpon) দিয়ে আম পাকাচ্ছে। দুপুরে স্প্রেরে করলেই সকাল হওয়ার সাথে সাথে সেসব আম গায়ে রং চড়ে পাকা আমে পরিণত হচ্ছে।
পরে যে সব আড়ৎদারের মাধ্যমে বেপারীরা আম ক্রয় করেছে তাদের বক্তব্য নিতে গেলে বেলতলা আম বাজারের এক আড়ৎদারের ছেলে মুকুল হোসেন প্রথম পর্যায়ে স্থানীয় সাংবাদিকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অসৎ আচরণ করে।
এসময় ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ মোঃ আরাফাত রহমান ও তার পিতা গিয়াসউদ্দিন এসে টাকা দিয়ে সাংবাদিককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হয়ে ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ লুকমান হোসেনকে দিয়ে সাংবাদিক’কে ডাকিয়ে নিউজ না করার জন্য নিষেধ করে।
এসব অনিয়মের বিষয়ে বেপারী মোঃ জিনারুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমারা তো স্প্রে করার জন্য প্রশাসনের টাকা দিয়েছি। আর বেপারী জালাল উদ্দিন জানান, সব ঘরেই তো স্প্রে দিয়ে আম পাকাচ্ছে, সবাই যে ভাবে পাকাচ্ছে আমিও সেই ভাবে আম পাকাচ্ছি।
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর (আরএমও)ত জানান লক্ষিনদার বলেন, আম পাকানোর জন্য সরকার নির্ধারিত স্প্রেরে ছাড়া অন্য যে সব কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানো হবে তা অবশ্যই মানব দেহের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ।
শার্শা উপজেলা সেনেটারী ইন্সপেক্টর শেফালী খাতুন বলেন, আম কেনাবেচা শুরু হয়েছে আমি এখনো জানিনা। তবে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন কোন বিষয় সামনে আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) প্রতাপ মন্ডল জানান, আমরা সার্বিক বিষয়ে বাজার মনিটরিং করছি। অসাধু ব্যবসায়ীরা যদি আম কেনা বেচা বা বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানোর চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নারায়ণ চন্দ্র পাল জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারো আম বাজারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন অনিয়ম তদারকি করছে। কোন রকম বাজারে চাঁদাবাজদের প্রশ্রয় দেওয়া হবেনা। পাশাপাশি কোন অসাধু ব্যবসায়ী যদি আমে বিষাক্ত কেমিক্যাল স্প্রে করে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
No comments:
Post a Comment