চলমান লোডশেডিংয়ের মধ্যে ভালো খবর দিয়েছে যশোরের বিদ্যুৎ বিভাগ। তারা চাহিদার কাছাকাছি বিদ্যুৎ পেতে শুরু করেছে। ফলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শহরে দিনে-রাতে চার-পাঁচবার লোডশেডিং হলেও সেই পরিমাণ দুর্ভোগ আর থাকবে না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের সর্বোচ্চা চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
যশোর শহরে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। প্রতিষ্ঠানটির (ওজোপাডিকো-১ এবং ওজোপাডিকো-২) দুটি দপ্তর শহর ছাড়াও শহরতলীর কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে আছে। যারা গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে চাহিদার প্রায় ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাচ্ছিল। এতে করে দিন-রাতে চার-পাঁচবার শোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছিলেন শহর-শহরতলীর মানুষ। তবে সেই ঘাটতি প্রায় পূরণ হওয়ার পথে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
ওজোপাডিকো যশোরের বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিরতণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ওজোপাডিকো-১ ও ২ এর অধীনে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ৫০-৬০ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে সেখানে গত সপ্তাহে পাওয়া যাচ্ছিল ৪০ মেগাওয়াট। প্রতিদিন ঘাটতি ছিল ১০-২০ মেগাওয়াট। তবে এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটেছে। গতকাল বুধবার বিদ্যুতের চাহিদা ৫৪ মেগাওয়াট। পাওয়া গেছে ৫০ মেগাওয়াট। এজন্য খুব একটা লোডশেডিংয়ের প্রয়োজন হয়নি। এটা আরো উন্নতি হবে। ঈদের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তিনদিন বন্ধ থাকার পরে আবারও উৎপাদন শুরু হয়েছে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) রাত ১টার দিকে কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। এতে করে যশোরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার আবু বকর শিবলী জানান, পিকআওয়ারে তাদের চাহিদা ১৬৪ মেগাওয়াট। পাওয়া যায় ১২৪ মেগাওয়াট। অফপিকে তাদের চাহিদা ১৪৫ মেগাওয়াট। পাওয়া যায় ১০৫ মেগাওয়াট। রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকায় এ সংকট হয়েছিল। রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ায় এ সংকট কিছুটা কমে যাবে। এছাড়া তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে চাহিদাও কিছুটা কমবে। আবার এখন বোরো ক্ষেতে সেচ দেওয়াও কমে গেছে। ফলে ঘাটতি কমে যাবে।
এদিকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ব্যাপক লোডশেডিং দেখা দিয়েছিল। কেন্দ্রটি আবারও উৎপাদনে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়। এ কোম্পানির অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয় । রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈ-গর্দ্দাশকাঠি মৌজায় এক হাজার ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ শেষে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়।
২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই শুরু হয় জমি ভরাট ও সড়ক নির্মাণের কাজ। প্রায় ৯ বছর বিশলা কর্মযজ্ঞ শেষে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে গেল প্রতিষ্ঠানটি।
No comments:
Post a Comment