খুলনা বিভাগের দশ জেলায় ১ হাজার ১৯৩টি ইটভাটার মধ্যে ৭৮৫টি ইটভাটারই পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন নেই। এসব ইট ভাটা গড়ে উঠেছে লোকালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি। কাঠ পুড়িয়ে এবং কালো ধোয়ার মাধ্যমে দূষণ ঘটাচ্ছে পরিবেশের। দীর্ঘদিন ধরে এসব ইটভাটায় ইট তৈরি ও বিক্রি করা হলেও পরিবেশ অধিদফতর তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরিবেশ অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের দশ জেলায় ইটভাটা রয়েছে মোট ১ হাজার ১৯৩টি। এর মধ্যে অনুমোদন রয়েছে ৪০৮টির, আর ৭৮৫টিই অবৈধ। অর্থাৎ ৬৬ শতাংশ ইটভাটাই অবৈধ।
সূত্রটি জানায়, যশোরের ২৮৯টি ইটভাটার মধ্যে ১১৭টি অবৈধ, খুলনা জেলার ১৪৬টি ইটভাটার মধ্যে ৪৬টি অবৈধ, বাগেরহাটের ৩৩টির মধ্যে ২টি অবৈধ, মাগুরার ৯৬টি ইটভাটার মধ্যে ৯২টি অবৈধ, ঝিনাইদহের ১২৪টির মধ্যে ১১৩টি অবৈধ, কুষ্টিয়ার ১৭০টির মধ্যে ১৪৮টি অবৈধ, চুয়াডাঙ্গার ১০২টির মধ্যে ৭৬টি অবৈধ, মেহেরপুরের ৬৪টির মধ্যে ৬৩টি অবৈধ, নড়াইলের ৬৭টির মধ্যে ৬২টি অবৈধ এবং সাতক্ষীরার ১০২টির মধ্যে বৈধতা নেই ৬৬টির।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলার ভদ্রা, হরি, শৈলমারী, আতাই ও আঠারোবাকি নদীর দুই তীর দখল করে গড়ে উঠেছে ৫০টি ইটভাটা। এসব ইটভাটার মধ্যে রয়েছে রূপসা উপজেলায় ১৮টি, ডুমুরিয়ায় ১৮টি, তেরখাদায় ১১টি ও দিঘলিয়ায় ৩টি।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ এর অনুচ্ছেদ ৮ এ বলা হয়েছে, আবাসিক এলাকা ও কৃষি জমি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না। সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান ও জলাভূমি এলাকায় ইটভাটা স্থাপন দন্ডনীয় অপরাধ।
ডুমুরিয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনবসতির কাছাকাছি প্রায় ১৯টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিমাই মল্লিক ও কৃষক আব্দুল হানিফ জানান, ইটভাটার কালো ধোয়ায় ক্ষেতের ফসল, ফলজ ও বনজ সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ ভাটার আশপাশে বসবাসকারী শিশুরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এলাকাজুড়ে পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে।
রূপসা উপজেলার আলাইপুরে ইবিএম ব্রিকস নামের ইট ভাটাটি আলাইপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে কোয়ার্টার কিলোমিটার দূরে। কলেজের অধ্যক্ষ আল মামুন সরকার বলেন, ভাটা চলাকালীন ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষতি করছে।
তবে ভাটার মালিক ইউনুস আলী শিকদার দাবি করেন, বাতাসে ধোয়া কলেজমুখী হয় না, বিপরীতমুখী হয়। এ কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, অনেক ইটভাটা খাস জমি ও নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে। আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। অনেক ইটভাটায় আইন ভঙ্গ করে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। দিনের পর দিন ইটভাটাগুলো পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে।তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবৈধ সুবিধা গ্রহণ এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে অবৈধ ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম চলছে দিনের পর দিন।পরিবেশ অধিদফতর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, তাদের কাছে অবৈধ ইটভাটাগুলোর তালিকা রয়েছে। সেই তালিকা আপডেট করা হচ্ছে। শিগগিরই অনুমোদন বিহীন ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উদাসীনতা, সুবিধা গ্রহণ এবং রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন।
No comments:
Post a Comment