যশোরে ঐতিহাসিক ‘স্বাধীনতা মঞ্চ’ সংরক্ষণ প্রকল্পের নামে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ - Jashore Tribune

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

as

a1

Thursday, December 8, 2022

যশোরে ঐতিহাসিক ‘স্বাধীনতা মঞ্চ’ সংরক্ষণ প্রকল্পের নামে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ

 


যশোরের টাউন হল ময়দানস্থ ঐতিহাসিক স্বাধীনতা মঞ্চ’ সংরক্ষণ প্রকল্পের নামে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। সচেতন নাগরিকদের দাবি মুক্তিযুদ্ধের অনুভূতিকে পুঁজি করে জেলা পরিষদ যে বরাদ্দ দিয়েছে তা মাত্রারিক্ত। এদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দাবি তিনি এ বিষয়ে অজ্ঞ। এ বিষয়ে প্রকৌশলীরা জানেন।

১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর যশোর টাউন হল ময়দানে স্বাধীন বাংলার অস্থায়ী সরকারের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। হানাদার মুক্ত বাংলার প্রথম এ জনসভায় প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন। যে মঞ্চে এই জনসভা হয়েছিল সেটি ঐতিহাসিক স্বাধীনতা উন্মুক্ত মঞ্চ হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এই মঞ্চটি সংরক্ষণের জন্য পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। যশোর জেলা পরিষদ মঞ্চটি নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরেছে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। কেবল মঞ্চ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ লাখ টাকা। প্রয়োজন না থাকলেও মঞ্চের সামনের টাউন হল ময়দানে মাটি ভরাট ও ফুটপাত নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের সাথেই যশোর ইনস্টিটিউটের কমনরুম সংস্কার, নতুন করে সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ ও বাথরুম নির্মাণের জন্য আরেকটি প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে এক কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। মঞ্চ নির্মাণ ও ইনস্টিটিউটের সংস্কার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। গতকাল ৭ ডিসেম্বর দেয়া হয়েছে মাটি ভরাট কাজের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি।

যশোর জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, স্বাধীনতা মঞ্চ নির্মাণের ঠিকাদারী পেয়েছেন মেসার্স ফিরোজ এন্টারপ্রাইজ। তার লাইসেন্সে কাজটি করছেন যশোর পৌরসভার কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা হাজী আলমগীর কবীর সুমন। কিন্তু সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় তিনি কাজটি অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন।

মঞ্চের পাশে কাজ দেখভাল করছিলেন শহরের পালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রওশন আলী। তিনি বলেন, তিনি মঞ্চের মার্বেল ও টাইলসের কাজটি করছেন। কাউন্সিলর হাজী সুমনের কাছ থেকে স্টেডিয়ামপাড়ার তরিকুল ইসলাম কাজটি কিনে নেন। তিনি কাজটি একই এলাকার সুমন নামে একজনের কাছে বিক্রি করেন। সুমনের কাছ থেকে তিনি কাজটি নিয়েছেন। কত টাকার কাজ তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

এদিকে যশোরের সচেতন নাগরিকদের দাবি মুক্তিযুদ্ধের অনুভূতিকে পুঁজি করে জেলা পরিষদ যে বরাদ্দ দিয়েছে তা মাত্রারিক্ত। মূলত এসব প্রকল্পের নামে হরিলুট চলছে। ফলে এ নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ যশোরের সম্পাদক তসলিম-উর-রহমান জানান, এ প্রকল্পটির সাথে যশোরের মানুষের অনুভূতি মিশে আছে। মূল মঞ্চটি ১৫ শ’ স্কয়ার ফিট এবং ছাদটি সাড়ে ৭শ’ স্কয়ার ফিট। সাধারণত একটি ওয়েল ফার্নিশড ভবন নির্মাণে ঠিকাদারী লাভ, ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে প্রতি স্কয়ার ফুটে ২৪শ’ টাকা পর্যš খরচ হয়। সেখানে একটি মঞ্চ, যার চারপাশ খোলা। এমন একটি স্থাপনা পুনঃনির্মাণে ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ অনেক বেশি। আমার কাছে মনে হয়েছে যশোর জেলা পরিষদ একটি হরিলুটের প্রকল্প দিয়েছে। একই মাঠে রওশন আলী নামে আরেকটি বড় মঞ্চ আছে। সেটি নির্মাণের বাজেটও এত ছিলো না। আমরা দেখছি সাম্প্রতিক সময়ে যেসব প্রজেক্ট নেয়া হয়েছে তা লুটপাটের জন্য। এটিও তেমন একটি প্রজেক্ট।

যমেক হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, যশোর জেলা পরিষদ ইনস্টিটিউটের উন্নয়ন, স্বাধীনতা মঞ্চ পুনঃনির্মাণের নামে হরিলুট শুরু করেছে। যে যেখান থেকে পাড়ছে লুটেপুটে খাচ্ছে। আমি ইনস্টিটিউটের একজন জীবন সদস্য ও যশোরের সচেতন মানুষ হিসেবে উন্নয়ন চাই। কিন্তু উন্নয়নের নামে হরিলুট মেনে নিতে পারি না। যে মঞ্চের সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জড়িত। সেই মঞ্চের নামে লুটপাট আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে যায় না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল লুটপাটের বিরুদ্ধে। আমি লুটপাটের এ প্রকল্পের বিষয়ে তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাই। সেইসাথে এর বিরুদ্ধে যশোরবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাই।

যশোর নাগরিক কমিটির আহবায়ক শেখ মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, যতবড় প্রকল্প হোক সেটা বড় কথা না। বিষয়টা হলো জনগণের ট্যাক্সের টাকা সঠিকভাবে, দুর্নীতি মুক্তভাবে খরচ হতে হবে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একজন সনামধন্য মানুষ। আশাকরি তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখবেন। অতিরিক্ত বরাদ্দ হলে সেটা ফেরতের ব্যবস্থা নেবেন।

যশোর শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকে মাহামুদ হাসান বুলু বলেন, ঐতিহাসিক স্বাধীনতা মঞ্চ ও ইনস্টিটিউটকে ঘিরে উন্নয়নের লক্ষ্যে যে পরিমান টাকা ব্যয় হচ্ছে তা দিয়ে আরো অনেক উন্নয়ন করা যেত। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উচ্চ মূল্যে বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতে নেয়। এটিও তেমন একটি প্রজেক্ট। ফলে এ প্রজেক্ট নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

অভিযোগ উঠলেও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, দুটি প্রকল্প দেয়া হয়েছে। তবে সেটার বরাদ্দ বাড়তি কিনা সে বিষয়ে আমি অজ্ঞ। বিষয়টি প্রকৌশলীরা ভালো জানেন। তারা বলতে পারবেন।

জেলা পরিষদের তথ্য মতে, যশোরের আলোচিত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী এডিবি উপখাত থেকে জেলা পরিষদকে ২ কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad