যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) বিষ প্রয়োগে ১৮টি কুকুর হত্যার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনা-নিন্দার ঝড়। বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) কুকুরগুলো হত্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনের পেছনে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।
ক্যাম্পাসে বিষ প্রয়োগে কুকুর হত্যার কাজে নিয়োজিত জাকির মিয়া বলেন, দুই হাজার টাকার চুক্তিতে তাকে চুয়াডাঙ্গা থেকে নিয়ে আসা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুন্সি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের নির্দেশে তিনি কুকুর নিধন করেছেন।
তবে নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুন্সি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান দাবি করেন, তিনি কুকুর মারতে নির্দেশ দেননি। কে বা কারা মেরেছে তাদেরকে তিনি চেনেনও না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাসান মোহাম্মদ আল ইমরান বলেন, তিনি ছুটিতে ছিলেন। পূজার ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার পর তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন।
যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, ক্যাম্পাসে কুকুর নিধনের জন্য কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
প্রাণি কল্যাণ বিল-২০১৯ এ বলা হয়েছে, মালিকবিহীন বা বেওয়ারিশ কোন প্রাণিকে হত্যা করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসের জেল হবে। পাশাপাশি কুকুরকে চলাফেরার সুযোগ না দিয়ে ২৪ ঘণ্টা বেঁধে রাখলেও তা নিষ্ঠুরতা হিসেবে গণ্য হবে এবং একই শাস্তি হবে।
এদিকে ক্যাম্পাসে কুকুর হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। প্রাণি প্রেমী শিক্ষার্থীরা ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। যবিপ্রবির আইপিই বিভাগের মাহবুবুর মাসনুন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'ক্যাম্পাসে 'কুকুর নিধন' এর নামে ১৮ টা কুকুর হত্যার অধিকার কে দিলো? একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নির্মমতার দায় কার? ক্যাম্পাসে সমাধান না হওয়া এতো শতো সমস্যা বাদ দিয়ে কুকুরের পেছনে কেনো?'
ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী ইসমাইল রহমান ফেসবুক পোস্টে বলেন, সবার কাছে ডেভিড নামে পরিচিত হলেও আমরা ইএসটিয়ানরা জেম বলেই ডাকতাম। জেম অনেক প্রিয় ছিল আমাদের একজন বড় ভাইয়ের। সবসময় চেষ্টা করতাম আমরা আসে পাশে থাকলে কিছু খাওয়ানোর। প্রতিদানও সে ভালোভাবেই দিত সঙ্গ দিয়ে।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'কুকুর হত্যা কোনো সমাধান নয়’, সব জীবনেই মূল্যবান’, ‘বন্ধ্যাকরণের মাধ্যমে মানবিকভাবে কুকুর সংখ্যা কমান’, ‘রাতের অতন্দ্র প্রহরী হত্যা বন্ধ করুন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কমিটির প্রধান ও পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মৌমিতা চৌধুরী বলেন, 'কুকুর নিধনের বিষয়টি আমার জানা নেই।
পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাকিবুল হক এমিল গণমাধ্যমকে জানান, প্রাণিকল্যাণ আইন অনুযায়ী কুকুর নিধন করা যাবে না। এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বহিরাগত কেউ এসে ন্যাক্কারজনক ও বেআইনিভাবে গণহারে কুকুর নিধন করল। অথচ কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ এবং দায় এড়াচ্ছেন এটা হতেই পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবোধের সঙ্গেও এটা সাংঘর্ষিক। কাজেই বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে দেখার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
No comments:
Post a Comment