বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ে গোলাগুলি চলছেই। তুমব্রু সীমান্ত এলাকা থেকে ওপারের মুহুর্মুহু গুলি ও গোলা বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে।
এছাড়া মিয়ানমার থেকে ছোড়া ভারী অস্ত্রের গুলি এপারের তুমব্রু বাজারের পাশে কৃষকের বাড়ির আঙিনায় এসে পড়েছে। মিয়ানমারে ওপারে গোলাগুলি ও গোলার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এপারের জনবসতিতে বেড়েছে আতঙ্ক; একই সঙ্গে শূন্যরেখায় বসবাসরত রোহিঙ্গারাও রয়েছেন ভয়ে।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসে সীমান্তের এপার থেকে। থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে মর্টারশেল। আর দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে একটানা গোলাগুলি, মাঝে মধ্যে ছোড়া হয় গোলা।
জানা গেছে, শনিবার দুপুরে তুমব্রু সীমান্তের মাঝেরপাড়ায় শোনা যায় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ; কখনো একটানা, কখনো থেমে থেমে আবার কখনো ভারী গোলার শব্দ। ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ে চলছে এই গোলাগুলি। যা শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে শুরু হয়ে একটানা চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। বিকট গোলাগুলির শব্দের ভয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা শিশুরা।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি ভারী অস্ত্রের গুলি এপারের তুমব্রু বাজারের পাশে কৃষক শাহজাহানের বাড়ির আঙিনায় এসে পড়ে। বাড়িটির পাশেই শূন্যরেখায় অবস্থান করা সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা বসতি। গোলাগুলিতে তারাও রয়েছে আতঙ্কে।
শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা নুরুল আমিন বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মেদা এলাকায় শুধু গোলাগুলি চলছে। শনিবার সকাল ও দুপুরে একটানা বেশ কয়েকবার গোলাগুলি হয়েছে এবং মর্টারশেল ছুড়েছে। তাদের কোনো দিন রাত নেই। তারা যখন খুশি তখন গোলাগুলি করছে। যার কারণে আমরা শূন্যরেখার রোহিঙ্গারা ভয়ে আছি।
আরেক রোহিঙ্গা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের খুব ভয় করছে। কারণ শূন্যরেখার পাশে মিয়ানমার সৈন্যদের ক্যাম্প। টিলার ওপর মিয়ানমারের সৈন্যরা ভারী অস্ত্র নিয়ে ঘাঁটি করেছে। যদি কোনো সময় একটা গোলা শূন্যরেখায় ফেললে সবাই মারা যাব। ঘটনা এমন চলছে প্রতিদিনই। আস্তে আস্তে ঢেকুবনিয়া থেকে গোলা মারছে, তুমব্রু থেকে বোমা মারছে, মেদা থেকেও মারছে। যাওয়ার কোনো পথ নেই।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মর্টারশেল ও গোলার বিকট শব্দে কাঁপছে তুমব্রু সীমান্ত। এ অবস্থায় সীমান্তের বাসিন্দারা যেমন আতঙ্কে রয়েছে, ঠিক তেমনি ক্ষেত-খামারে যেতেও সাহস করছেন না বাসিন্দারা।
তুমব্রু মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা বিবি আয়েশা বলেন, শুক্রবার ৩টার পর থেকে গোলাগুলি শুরু হয়েছে। এরপর সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত এ গোলাগুলি মিয়ানমারের ওপারে চলে। যার কারণে রাতে অন্যের বাড়িতে ছিলাম। আবার সকাল ৬টায় বাড়িতে চলে আসি। কিন্তু শনিবার সকাল ৮টার পর আবারও গোলাগুলি শুরু হয়। যা চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত। এ অবস্থায় খুব ভয়ের মধ্যে ঘরে রয়েছি।
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, কোনারপাড়া শূন্যরেখার পাশে ঢিলার ওপর মিয়ানমার সৈন্যদের ক্যাম্প। ক্যাম্পের পূর্বপাশ থেকে শুধু গোলাগুলি হচ্ছে। কে কোন দিক থেকে গোলাগুলি করছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৩নং ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ.কে.এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কখন গুলি শুরু হয়, কখন বন্ধ হয়, তার কোনো হিসাব নেই। গত ২০ থেকে ২৫ দিন হচ্ছে গোলাগুলি ও গোলা বর্ষণ হচ্ছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে। কিন্তু তাদের অভ্যন্তরে এসব হলেও মাঝে মধ্যে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসে পড়ছে।
গত শুক্রবারও (০৯ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমারের ভেতরে গোলাগুলির করার সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনারপাড়াতে এসে পড়েছে। তবে আমরা আমাদের মতো সীমান্তে বসবাস করছি, তাদের এই গোলাগুলি মানুষ তো স্বাভাবিকভাবে কিছুটা আতঙ্কে। আর বিজিবিসহ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছে।
এর আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টারশেল বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে পড়ার ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে একাধিকবার কঠোর প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment