যশোরের আদালতগুলোতে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির তাগিদ দিয়েছেন উচ্চ আদালতের মনিটরিং কমিটির খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। বিশেষ করে ১০ বছরের আগের মামলার উপর দৃষ্টি দিতে বলেছেন তিনি। রোববার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, পুরানো মামলাগুলো যদি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয় তাহলে বিচার প্রার্থীদের কাছে আইনের প্রতি আস্থা আরও দৃঢ় হবে। বছরের পর বছর বিচার প্রার্থীদের আর অপেক্ষা করতে হবে না। আরও বেশি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করা যাবে।
তিনি বলেন, মামলা জট কেবল নিম্ন আদালতে রয়েছে এমনটি না। উচ্চ আদালতেও রয়েছে। এজন্য সুপ্রিম কোর্ট সারাদেশের মামলার অবস্থা পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। মোট কথা সুপ্রিম কোর্ট মামলার জট কমাতে চায়। একইসাথে বিচার প্রার্থীদের দ্রুততম সময়ে বিচারের সুফল দিতে চায়। এ কাজে বিচারক, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
যশোর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ।
সভায় সিনিয়র জেলা জজ বলেন, যশোরের আদালতে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বিচারকেরা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যার ফলে বিচারপ্রার্থীরা এখন দ্রুত সেবা পাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে বিচারকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-২ এর বিচারক নিলুফার শিরীন, স্পেশাল জেলা ও দায়রা জজ সামসুল হক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন-১ এর বিচারক গোলাম কবির, ভারপ্রাপ্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ আহম্মেদ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক কবীর উদ্দিন পরামানিক, ৩য় আদালতের বিচারক ফাহমিদা জাহাঙ্গীর, ৪র্থ আদালতের বিচারক সোহানী পূষণ, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক আসিফ ইকবাল, ২য় আদালতের বিচারক শিমুল কুমার বিশ্বাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। যশোরে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির তাগিদ বিচারপতির
সহ জজশিপ ও ম্যাজিস্ট্রেসির বিচারকরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতে আদালতের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম প্রজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরে নানা সমস্যা ও সফলতার বিষয়টি বিচারপতিকে অবগত করা হয়।
বিদ্যমান সমস্যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন সম্পূর্ণ ব্যবহার উপযোগী না হওয়া, পরিচ্ছন্নকর্মীর অভাব, মালখানায় স্থান সংকট, লিগ্যাল এইড অফিসে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাব, দেওয়ানী আদালতগুলোতে স্টেনোর অপ্রতুলতা ও প্রয়োজনীয় ফর্মের অভাব রয়েছে বলে জানানো হয়। আদালত কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে জনমুখি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে সভায় জানানো হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কজলিস্ট প্রদর্শন, এজলাসের বাইরে সাক্ষীদের অবস্থান উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি, হেল্পডেস্ক তৈরি, মাতৃদুগ্ধ কর্নার স্থাপন, কাঠগড়া ও হাজতখানায় কার্পেট স্থাপন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, লিগ্যাল এইড কার্যক্রম গতিশীল করা, পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতি প্রতিষ্ঠান পদক্ষেপ গ্রহণ ও নিয়মিত আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা।
মামলা দ্রুত নিশ্চিতকরণ ও সাক্ষীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে পদক্ষেপ সম্পর্কে বলা হয়,
পেন্ডিং প্রসেস লিস্ট প্রস্তুতকরণ ও সরবরাহ, সমন জারির ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পুলিশিং কমিটির সাহায্য গ্রহণ, ডাক্তার ও সরাসরি সমন জারি এবং সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সভা সেমিনার করা হয়।
সভায় বিভিন্ন অর্জনের বিষয় উল্লেখ করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে, ২০১৯ সালের জজ শিপের লিগ্যাল এইড অফিস খুলনা বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। চলতি বছরেও প্রথম হতে চলেছে। প্রবেশনাধীন ক্যান্সারে আক্রান্ত আসামির সরকারিভাবে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, বিদ্যুৎ আদালতের আদায় করা চার কোটি ৪০ লাখ ৮২ হাজার ১০৩ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে।
সভায় মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। যশোরের আদালতে চলতি বছরে ২৬ হাজার ৪০৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। তারমধ্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ১৩ হাজার ৩৭২, স্পেশাল জজ আদালত ও নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে ৮১১ ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১২ হাজার ২২৩ টি মামলা রয়েছে। এসব আদালতে চলতি বছর মামলা দাখিল হয়েছে ২৭ হাজার ৭৩৯টি। বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে ৮২ হাজার ৩৪৩ টি।
অনুষ্ঠান শেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পক্ষ থেকে বিচারপতিকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। বিকেলে স্থানীয় সার্কিট হাউজে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও আইন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। রাতে যশোর ত্যাগ করেন তিনি।
No comments:
Post a Comment