করোনা মহামারির কারণে দু’বছর বন্ধের পর আবারও প্রাণের উৎসবে মাতবে যশোর। স্বল্প আয়োজনে হলেও এবার পহেলা বৈশাখ ফিরছে সেই চিরচেনা রূপে। সন্ধ্যায় কোনোকিছু না হলেও থাকছে নানা আয়োজনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রভাতি অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখ সকাল নয়টায় যশোর মুন্সী মেহেরুল্লাহ ময়দান (টাউনহল) থেকে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। পহেলা বৈশাখের সমগ্র অনুষ্ঠানে থাকবে পুলিশি নিরাপত্তা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কালেক্টরেট সভাকক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন প্রস্তুতি কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
আর ছয়দিন পর বিদায় নেবে বাংলা ১৪২৮ সন, দ্বারে কড়া নাড়ছে নতুন বছর ১৪২৯। নতুন বছরে নতুন সূর্যের মঙ্গলালোকে উদ্ভাসিত হয়ে মুছে যাবে জরা আর গ্লানি। এই দিনটি শুধু বাংলা পঞ্জিকার নিছক প্রথম দিন না;এই দিনটি বাঙালি জাতীর কাছে এক সর্বজনীন উৎসবের মাহেন্দ্রক্ষণ। করোনা অতিমারির কারণে বিগত দু’বছর পহেলা বৈশাখ নীরবে নিভৃতে পার হয়েছে। অনলাইনে যে অনুষ্ঠান হয়েছে তা অনেকের কাছে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। এবার করোনার চোখ রাঙানি না থাকলেও রমজানের কারণে অনেকেই অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। সেই ধোঁয়াশাও কেটে গেছে। গণমানুষের প্রাণের অনুষ্ঠান পহেলা বৈশাখ সীমিত পরিসরে হলেও আয়োজন করা হচ্ছে। হবে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। যেন শেকড়েই ফিরছে প্রাণের উৎসব।
পহেলা বৈশাখ সকাল সাতটা এক মিনিটে পৌরপার্কে নববর্ষের বর্ণিল আয়োজন করবে উদীচী যশোর। বরাবরের মতো দর্শক মাতাতে থাকবে নানা আয়োজন। মুসলিম একাডেমি মাঠে একই সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে পুনশ্চ। ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ মাঠে বসবে তীর্যক যশোরের নববর্ষের আয়োজন। সকাল সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত দু’ ঘন্টার সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকবে টাউন হল মাঠেও। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের আয়োজনে অনুষ্ঠানে থাকবে জোটভুক্ত সকল সংগঠনের পরিবেশনা। সকাল নয়টায় টাউনহল মাঠ থেকে শুরু হবে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। জেলা প্রশাসন ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এ আয়োজনে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেবেন।
মঙ্গল শোভাযাত্রাটি টাউনহল ময়দান থেকে শুরু করে দড়াটানা হয়ে চৌরাস্তা ঘুরে মাইকপট্টি দিয়ে আবার টাউন হল মাঠে এসে শেষ হবে। শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া প্রতিটি সংগঠনের নান্দনিক উপস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে সেরা পাঁচের জন্য থাকবে বিশেষ পুরস্কার। শোভাযাত্রা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ব নির্ধারিত বিচারকগণ সূচারু পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই সেরা পাঁচ নির্ধারণ করবেন। শোভাযাত্রা শেষে পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হবে।
কয়েকটি সংগঠন আলাদা অনুষ্ঠান করলেও সকল সংগঠনের নববর্ষে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে টাউনহল মাঠে দু’ ঘন্টার প্রভাতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। তিনি আশা ব্যক্ত করেন করোনা বিরতির পর এ শোভাযাত্রা গণমানুষের সরব অংশগ্রহণে হবে মুখরিত ও বর্ণিল।
জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন,পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব। রমজানের মধ্যে এ আয়োজনে যেমন রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে; তেমনি সর্বজনীন উৎসবের প্রাণের এ আহ্বানে এক সাথে মিলিতও হতে হবে। বাঙালি সংস্কৃতির এ মিলন মেলার আয়োজনে অপশক্তিকে দেশীয় সংস্কৃতি দিয়েই রুখতে হবে।
No comments:
Post a Comment