বেনাপোলে অস্ত্র পাচার সিন্ডিকেটের হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে - Jashore Tribune

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

as

a1

Wednesday, January 19, 2022

বেনাপোলে অস্ত্র পাচার সিন্ডিকেটের হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে

 


যশোর জেলার বিভিন্ন সীমান্তের অবৈধ পকেট ঘাট দিয়ে ভারত থেকে পাচার করে আনা হচ্ছে ছোট-বড় অস্ত্রের চালান। প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে অস্ত্র সিন্ডিকেটের হোতারা সক্রিয় থাকলেও তারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। কাড়ি কাড়ি অস্ত্রের চালান পাচার করে এনে দেশময় ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। দু-একটি চালান ধরা পড়লেও বিশেষ ব্যবস্থায় অস্ত্র পাচার সিন্ডিকেটের হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। সংশ্লিষ্টদেও সাথে রফা করেই এসব অস্ত্র পাচার সিন্ডিকেটের হোতারা থাকছে ধরা ছোয়ার বাইরে। যদিও প্রশাসনের পক্ষথেকে বলা হচ্ছে তারা তৎপর রয়েছে।


সীমান্তের সূত্রগুলো বলছে সীমান্তের ঘাট মালিক, তাদের ক্যাডার এবং সিন্ডিকেটের হোতারা সবাই ক্ষমতাসীদের আশির্বাদপুষ্ট হওয়ায় তারা বাড়তি অনৈতিক সুবিধা পাচ্ছে। অনেককে অস্ত্রসহ ডিবি, র‌্যাব ও বিজিবি আটক করে পুলিশে সোপর্দ্য করছে। কতিপয় পুলিশ সেই সব অস্ত্র পাচারকারী ও ব্যবসায়ীদের রিমান্ডে নিয়ে ‘বিশেষ ব্যবস্থায়’ জামাই আদর করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অতি সম্প্রতি গত ২১ ও ২২ ডিসেম্বর র‌্যাব ও বিজিবি পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে ৫টি অস্ত্র, ৯টি ম্যাগজিন এবং ৪১ রাউন্ড গুলিসহ চারজনকে আটক করে। পুলিশ তাদের রিমান্ডেও নেয়। কিন্ত্র এই চক্রের গডফাদারদের আটকে সংশ্লিষ্ট মহলের তেমন কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি বলে দাবি করছেন সীমান্তবাসীরা।

সীমান্তের সূত্রগুলো জানায়, প্রতিদিন যশোর জেলার ভারত সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে অস্ত্র আসছে অবৈধভাবে। সংশ্লিষ্টদের সাথে এক প্রকার রফা করেই চোরাচালানিরা এসব ব্যবসা করছে বলে জানা গেছে। গত ২১ ডিসেম্বর রাতে র‌্যাব-৬ সিপিসি-২ ঝিনাইদহ ক্যাম্পের একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বেনাপোলের দিঘিরপাড় এলাকার মেসার্স শাহজালাল ফিলিং স্টেশনের সামনে অভিযান চালায়। এ সময় সেখান থেকে ৪টি বিদেশি পিস্তল, ৮টি ম্যাগজিন ও ৩৪ রাউন্ড গুলিসহ অস্ত্র ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ ও আজিজুর রহমানকে আটক করে। এ ঘটনায় র‌্যাবের ডিএডি নায়েব সুবেদার মো. নুরুল আমীন ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনে বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলায় আটক দুজনকে আদালতে সোপর্দ করে তাদের প্রত্যেকের ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. রফিকুল ইসলাম। অপরদিকে গত ২২ ডিসেম্বর বিজিবি সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শার্শা উপজেলার পুটখালীতে অভিযান চালান। এ সময় সেখান থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন, ১টি ওয়ান শ্যুটারগান ও ৭ রাউন্ড গুলিসহ নাদিম ও শামীম রেজাকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় বিজিবি নায়েব সুবেদার জাকির হোসেন ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনে বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলায় আটক দুজনকে আদালতে সোপর্দ করে তাদের প্রত্যেকের ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই মো. রোকনুজ্জামান। অপরদিকে গত ২২ ডিসেম্বর সকালে বিজিবি সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন, ১টি ওয়ান শ্যুটারগান ও ৭ রাউন্ড গুলিসহ নাদিম ও শামীম রেজাকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় বিজিবি নায়েব সুবেদার জাকির হোসেন ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনে বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলায় আটক দুজনকে আদালতে সোপর্দ করে তাদের প্রত্যেকের ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। পুলিশের করা আবেদনের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক তাদের প্রত্যেকের ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাদের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কোর্টে সোপর্দ্যও করেছে। কিন্তু এই চক্রের হোতাদের আটকে কোন প্রকার পুলিশি এ্যাকশন চোখে পড়েনি। সীমান্ত এলাকার সবাই জানে অস্ত্রবাজ ও অস্ত্রব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ, আজিজুর রহমান নাদিম ও শামীম রেজা কার লোক। এরা সবাই নাসির-রমজান এবং দেব কুমার সিন্ডিকেটের ক্যাডার হিসেবে বেশি পরিচিত। এদের গডফাদার হচ্ছে পুটখালী সীমান্তের আলোচিত ডন নাসির উদ্দীন।  অভিযোগ রয়েছে রক্ষকরাই ভক্ষক হয়ে গডফাদার ফাদার নাসিরের বাড়িতে খানাপিনা করেন এবং নগদ সহ উপঢৌকনও নেন। যার পুরস্কার স্বরুপ অস্ত্রবাজ ও অস্ত্রব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ, আজিজুর রহমান নাদিম ও শামীম রেজা আটক হলেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে  সীমান্তের গডফাদার ডন নাসির। এরআগে, ৮টি আধুনিক অস্ত্র, ৮টি গুলি এবং ১৬টি ম্যাগজিনসহ আকুল হোসাইন এবং তার চার পরীক্ষীত দোসরকে পুলিশ আটক করে। গ্রেফতার হওয়া অন্যরা হলেন- ইলিয়াস হোসেন, আবুল আজিম, ফজলুর রহমান ও ফারুক হোসেন। অদৃশ্য কারণে চাঞ্চল্যকর এই অস্ত্র মামলাও ধামা চাপা পড়তে চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সীমান্তের সূত্রগুলো আরও জানায়, ভারতের মুঙ্গের টাউন, কাশিম বাজার, মফস্বল, বারিয়ারপুরসহ কয়েকটি এলাকায় গড়ে ওঠা ৪৫/৫০টি কারখানা থেকে অস্ত্র, গুলি পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্য এবং বাংলাদেশে পাচার হয়।এসব কারখানায় তৈরি দেশি বন্দুক, পিস্তল, ম্যাগজিন ও রিভলবারের মতো অস্ত্র তৈরি হচ্ছে। আমেরিকার তৈরি নাইন এমএম পিস্তলের অবিকল পিস্তলও তৈরি হয় এসব এলাকায়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই আগ্নেয়াস্ত্র আসছে সীমান্ত শহর বনগাঁয়। বাংলাদেশে পাচারের জন্য শার্শা উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত ঘাটকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীরা। কারণ, এসব এলাকার বিপরীতে ভারতীয় সীমান্তে অনেক স্থানেই কাঁটাতারের বেড়া নেই। যশোরের শার্শা সীমান্তের ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা সীমান্তের আংরাইল সহ বিভিন্ন গ্রাম। যার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী নদী। ওপারের অস্ত্র কারবারিরা গোসল করতে নেমে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে অস্ত্রের চালান ভাসিয়ে দেয়। ভাসতে ভাসতে সেই অস্ত্রের চালান প্রবেশ করে বাংলাদেশের নদীর অংশে। এপারের ব্যবসায়ীরা একই ভাবে গোসল করতে নেমে সেই চালান নদী থেকে তুলে নেয়। সেই অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। অস্ত্রের চালানসহ গ্রেফতার হওয়া ব্যবসায়ীদের জেরা করে সশ্লিষ্টরা নতুন রুটের এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে।  সূত্র বলছেন, বর্তমানে ৭.৬৫ বোরের অস্ত্রের দাম ভারতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার রুপি। দেশে এগুলো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। ৯ এমএম পিসÍল ৩ ইঞ্চি ও ৫ ইঞ্চি ব্যারেলের পাওয়া যায়। ৩ ইঞ্চি ব্যারেলের ৫৭ হাজার রুপির পিস্তল বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার এবং ৫ ইঞ্চির ৫২ হাজার রুপির পিস্তল বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ৮৫ হাজার টাকায়। ৭.৬৫-এর গুলি বিক্রি হচ্ছে ৮০০টাকা থেকে ১২০০ টাকায়। যারা সীমান্তের ঘাট চালায় তার সব সময় লাইসেন্স বিহীন পিস্তল ও গুলি নিয়ে চলাফেরা করে।


অস্ত্রবাজ ও অস্ত্রব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ, আজিজুর রহমান নাদিম ও শামীম রেজা কার লোক। কারা এদের গডফাদার রিমান্ডে নিয়ে তাদের সম্পর্কে কিছু জানা গেছে কিনা এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান বলেন, “কে এদের গডফাদার, কারা অস্ত্র এই অস্ত্র পাচার ও বিকিকিনি সিন্ডিকেটের হোতা এবং অস্ত্রের উৎস কি এসব খবর আমার জানা নেই। তবে, তারা অস্ত্রপাচার রোধে গুরুত্বের সাথে কাজ করে যাচ্চেন।


এ বিষয়ে র‌্যাব-৬ যশোরের কোম্পানী কমান্ডার লেঃ নাজিউর রহমান জানান, তারা অস্ত্র উদ্ধারে গুরুত্বের সাথে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তারা বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধারও করেছেন। অনেকেই আটক হয়েছেন। তাদের গড ফাদার কে বা কারা সে বিষয়েও তারা তদন্ত করছেন।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad