যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার বাস মালিকদের দুটি সংগঠনের বিরোধে দু’জেলার প্রবেশ দ্বারে পৃথক দুটি অস্থায়ী টার্মিনাল করে নিজ নিজ জেলার মধ্যে বাস চালানোর কারনে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারন বাসযাত্রীরা। দু’সপ্তাহ ধরে এই অবস্থা চললেও বাস মালিক সমিতি কিম্বা প্রশাসনের কোন নজরদারি এখানে নেই।
১৮ নভেম্বর থেকে যশোর-সাতক্ষীরা (ভায়া-নাভারন) মহাসড়কে চলাচলকারী এক জেলার বাস অন্য জেলায় ঢোকা বন্ধ রয়েছে৷ যশোর থেকে ছেড়ে আসা সাতক্ষীরাগামী বাস জেলার শেষ প্রান্ত বাগআঁচড়া এবং সাতক্ষীরা থেকে ছাড়া যশোর গামী বাস সাতক্ষীরার শেষ প্রান্ত বেলতলা বাজার পর্যন্ত চলাচল করছে।
কেন এই অবস্থা জানতে চাইলে যশোর ইন্টারডিস্ট্রিক বাস সিন্ডিকেট (আইডিবিএস) এর নেতা নীল কমল সিংহ বলেন,যশোর-সাতক্ষীরা রুটে যশোর ইন্টারডিস্ট্রিক বাস সিন্ডিকেট (আইডিবিএস) ও সাতক্ষীরা ডিস্ট্রিক্ট বাস সিন্ডিকেট (এসডিএস) এর ১৭৬টি বাস চলাচল করে।এর মধ্যে আইডিবিএসের বাসের সংখ্যা ১০৭টি।’এ’ ও ‘বি’ দুটি গ্রুপে বাসগুলো যশোর থেকে ছাড়ে।’এ’ গ্রপে যশোরের বাস আর ‘বি’ গ্রুপে সাতক্ষীরার বাস।সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ গ্রুপের বাসগুলো ছাড়ে।পরে চলে বি গ্রুপের বাস।প্রতিবছর এই গ্রুপের সময় পরিবর্তন করার কথা থাকলেও সাতক্ষীরার সমিতি সেটা মানতে না চাওয়ায় এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।এ বাদেও যশোর থেকে ছেড়ে যাওয়া যশোরের বাসগুলো সাতক্ষীরা টার্মিনাল থেকে যশোরে ফেরে অথচ সাতক্ষীরার বাসগুলো কালীগঞ্জ পর্যন্ত যায়।যশোর সমিতির দাবি তাদের বাসগুলো কালীগঞ্জে যেতে দিতে হবে।
অবশ্য সাতক্ষীরা বাস মালিক সমিতির নেতা সাইফুল করিম সাবু জানান, যশোর–সাতক্ষীরার দুই মালিক সমিতির বাস একই মহাসড়কে চলাচল করে।যাত্রী বহন করে।যশোর বাস টার্মিনাল থেকে সাতক্ষীরার মালিক সমিতির বাসগুলো সন্তোষজনক টিপ বা সিরিয়াল না পাওয়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ তবে অতিদ্রুত যাতে জন দুর্ভোগের সমাধান হয় তার জন্য যশোর বাস মালিক সমিতির কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় বসা হবে৷
যশোর ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট বাস সিন্ডিকেট মালিক সমিতির সড়ক সম্পাদক আমির হোসেন জানান,দীর্ঘদিন যাবৎ যশোর মালিক সমিতির বাস সরাসরি সাতক্ষীরা হয়ে কালিগঞ্জ পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয় না। সাতক্ষীরা টার্মিনালেই সকল যাত্রী নামিয়ে সেখান থেকে যশোরে ফিরতে হয়। দীর্ঘদিনের এ সমস্যার সমাধান চেয়ে সাতক্ষীরা মালিক সমিতির নিকট আহ্ববান জানাইছি কিন্তু তাদের সাড়া পাইনি।এই কারনে জেলা ভিত্তিক বাসে যাত্রী বহন করা হচ্ছে৷
সরেজমিন দেখা যায় যশোর টার্মিনাল থেকে ছেড়ে আসা বাস বাগআঁচড়াতে এসে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছে সেখান থেকে সাতক্ষীরা যাওয়ার জন্য আসা যাত্রীরা ভ্যান ইজিবাইক কিম্বা পায়ে হেটে বেলতলা বাজারে এসে সাতক্ষীরা গামী বাসে উঠছেন।
সরাসরি যশোর-সাতক্ষীরা রুটে বাস না চলায় রাস্তার মাঝে বাস পরিবর্তন করতে যেয়ে বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ্য নারী-পুরুষ ও স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা পড়েছে মহাবিপাকে৷এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কাজে বের হওয়া সাধারণ মানুষজনও।
একজন বাস চালক হাফিজুর রহমান বলেন,আগের মত বাস চলাচল না করায় সাধারণ যাত্রীরা যেমন দূর্ভোগে পড়েছে তেমনি স্টাফদের আয়ও কমে গেছে।বাস সাতক্ষীরা থেকে যশোর পৌঁছুলি স্টাফরা পেতো সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০টাকা।এখন সাতক্ষীরা থেকে বেলতায় আসলি ১০০টাকা থেকে ১৫০টাকার বেশি পাচ্ছে না।এ অবস্থা আর কিছুদিন চললে আমাদের হাড়ি আর চুলোয় ওঠপে না।
যশোর সমিতির বাসের একজন কন্ডাকটর (ভাড়া আদায়কারি) লুৎফর রহমান বলেন,এ গ্রুপের চাইতে বি গ্রুপের সময়ে বাসের আয় বেশি।তাই সবাই বি গ্রপের টিপ চাই।
সাতক্ষীরার বাঁশদহ গ্রামের আমেনা বেগম (৫৫) তার বাবার অসুস্থতার খবরে তিন সন্তান নিয়ে যশোরে যাচ্ছেন।বেলতলায় এসে নামার পর তার দূর্ভোগের যেন অন্ত নেই।
আমেন বলেন,এক টানে(সরাসরি) যশোর যাবো,এখন ওরা কচ্ছে ওদিকি বাস যাবে না।অন্য বাসে উঠতি হবে।মেয়ে মানুষ আমরা কী ওসব বুঝি।বাসওয়ালাদের এসব আর ভাল লেগদেছ না।
সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সিভিল ইন্জিনিয়ারিংএর ষষ্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা দিচ্ছেন শার্শার জামতলার নওরোজ আফরিন।
নওরোজ বলেন,করোনায় মেস বন্ধ তাই বাড়ি থেকে যেয়ে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।পথের মাঝে এসে বাস পাল্টাপাল্টি খুব অস্বস্থিকর।এতে দূর্ভোগ যেমন তেমনি সময়ের অপচয় ও খরচখরচাও বেশি।প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এর সমাধান নেই কিন্তু তারা দেখেও না দেখার ভান করছে।
No comments:
Post a Comment