গুচ্ছভুক্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অতিরিক্ত ভর্তি ফি কমানোরসহ ৩ দফা দাবীতে বুধবার সকাল ১১ টায় প্রেসক্লাব যশোরের সামনে মানববন্ধন করেন ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০২০-২১ সেশনে তার ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর গুচ্ছভুক্ত যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি অনুষদে আবেদনের ক্ষেত্রে ৬৫০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১২০০ টাকা আবেদন ফি জমা দিয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার পরও, গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অন্যায্যভাবে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি আলাদা ফি নির্ধারণ করা হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনার পাশাপাশি যুক্তি দেখানো হয়েছিল যে, এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হয়রানি হ্রাস পাবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। সমূহ শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবল বাণিজ্যের মানসিকতা গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতির দৃশ্যমান। শুরু থেকেই এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের চেষ্টা চলছে। গুচ্ছভুক্ত ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরিক্ষার চূড়াতে আবেদনের ফি সর্বপ্রথম ৫০০ টাকা নির্ধারণ করলেও পরবর্তীতে ১০০ টাকা বৃদ্ধি করে ৬০০ টাকা করা হয়। নানা অজুহাতে সেই ভর্তি ফিকেও দ্বিগুণ করে ১ হাজার ২০০ টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে সেই অতিরিক্ত ফি নিয়েও ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
এছাড়া ও ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা দাবী করেন গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সামনের বার ও সেকেন্ড টাইম বহাল রাখতে হবে।
এই প্রসঙ্গে ফারজানা রহমান ইভা নামে এক ভর্তিচ্ছু জানান, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ভোগান্তি কমানোর পরিবর্তে কয়েকগুন বাড়িয়েছে। রেজাল্ট দিয়েছে কিন্তু কোন মেরিট পজিশন দেয়া হয়নি। একজন শিক্ষার্থী মেরিট পজিশন না পেলে নিজের অবস্থান কিভাবে বুঝবে আর না বুঝে আবেদনই বা কিভাবে করবে। এই অবস্থায় যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি আবেদনের সার্কুলার প্রকাশ হয়েছে। সার্কুলারে বিজ্ঞানসহ সকল বিভাগের প্রতিটি অনুষদে আবেদন ফি ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এইভাবে ৫ টি অনুষদে আবেদন করতে ৩৩০০ টাকা লাগবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি তিন চার হাজার টাকা লাগে তাহলে ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষদে আবেদন করতে অনেক টাকা লেগে যাবে । যা একজন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একেবারেই সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই বলতে পারে একজন শিক্ষার্থী এতোগুলো ভার্সিটিতে আবেদন করবে না। কিন্তু যেহেতু আমাদের কোন মেরিট পজিশন দেয়নি তাই কারো বোঝার কোন উপায় নেই যে কে কোথায় চান্স পেতে পারে। তাই বাধ্য হয়ে সবাইকেই আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে ক্ষতি হবে শুধু মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের। ৫০ পেয়েও হয়তো একজন গরীব মেধাবী আবেদন করতে পারবে না। আবার যে ৩০/৩৫ পাবে তার ভালো আর্থিক সাপোর্ট থাকলে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবে। আগে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা ভাবে পরীক্ষা নিত। একজন পরীক্ষার্থী হয়তো ২/১ টা ভার্সিটিতে চান্স পেত। এবং সে তখন ১/২ টাতেই আবেদন করতো। এতে করে এখনকার মতো এতো অর্থ খরচ হতো না তার।
মঈনুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, গুচ্ছ পরীক্ষা পরবর্তী ভর্তি আবেদনের নির্দেশিকায় যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক অনুষদে জন্য ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত টাকা লাগে তাহলে ২০টা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন করতে কত টাকা লাগবে সেটি বোঝাই যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে এত টাকা দিয়ে আবেদন করা সম্ভব হবে না। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়েও অনেকে আবেদন করতে পারবেন না। এতে করে আমাদের স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে। ভোগান্তি কমানোর কথা থাকলেও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আমাদের ভোগান্তি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
এছাড়া ও বক্তব্য রাখেন ফারজানা আক্তার ইভা,জনি ইসলাম,মুরসালিন হাবিব,জান্নাতুল ফোয়ারা,পলাশ পাল প্রমূখ।
সবশেষে বক্তারা বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দীর্ঘদিন ধরেই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের চিন্তা করছিলো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির সেই আহবানে সাড়া দিয়ে প্রথম বারের মতো ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি সর্ব মহলে প্রশংসা কুড়ালেও আবেদন ফি বৃদ্ধি, মেরিট পজিশন না দেয়া এবং সবশেষ বিষয় পছন্দের জন্য বাড়তি ফি নির্ধারণ করায় এই পদ্ধতির পরীক্ষা আয়োজনের সফলতা ঢাকা পড়েছে ব্যর্থতায়।
No comments:
Post a Comment