গোটা ভবনে লাল-সবুজের আঁচড়। ছাদে গেলেই চোখে পড়ে শুধু সবুজের সমারোহ। সারি সারি বিভিন্ন ফলের গাছ। গাছে ঝুলছে ফল। আছে ফুলগাছও। পাখির কলকাকলিতে মুখর। এখানে সৃজন করা হয়েছে ছাদবাগান। রোদ-বৃষ্টিতে ছাদে বসে যে কেউ এসব দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। ছাদবাগানের মধ্যেই রয়েছে বসার ব্যবস্থা। এ দৃশ্য যশোরের অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের ছাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন নিজ উদ্যোগে চার বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের ছাদে এ বাগান করছেন। শুধু ছাদে নয়, ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছ, রয়েছে সবজিখেত।
ছাদবাগানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দেশি-বিদেশি মিলে ১৩ প্রজাতির অর্ধশতাধিক গাছ রয়েছে। এর মধ্যে মাল্টা, সফেদা, জামরুল, ডালিম, পেয়ারা, পেঁপে, বাতাবি লেবু, কাগজি লেবু, চায়না লেবুসহ বিভিন্ন প্রজাতির আমগাছ রয়েছে। ফলন এসেছে সফেদা, বাতাবি লেবু, কাগজি লেবু, চায়না লেবু ও ডালিমগাছে। ছাদে রয়েছে রঙ্গন ফুল। মৌসুমি ফুল ডালিয়া ও গাঁদা ফুলের চারা লাগানো হয়েছে। ছাদের একপাশে কংক্রিটের তৈরি ছয়টি বসার টুল ও একটি চেয়ার রয়েছে, রয়েছে একটি টেবিল। রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য আছে ব্যাঙের ছাতার আদলে তৈরি দুটি কংক্রিটের ছাতা।
ইউনিয়ন কমপ্লেক্সের ফাঁকা জায়গায় বকুল, কৃষ্ণচূড়া, পেঁপে, আমড়া, ঝাউ, তালসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ রোপণ করে বাগান করেছেন চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন। একপাশে করেছেন সবজিখেত। এর মধ্যে পেঁপের ফলন এসেছে। ইউপি চেয়ারম্যান জানালেন শখ থেকেই চার বছর আগে বিভিন্ন ফল ও ফুলের গাছ রোপণ করে ছাদবাগান শুরু করেন তিনি। আস্তে আস্তে বাড়িয়েছেন বাগানের পরিধি।
২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট প্রেমবাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান মফিজ উদ্দীন। এর প্রায় সাড়ে তিন মাস পর ওই বছরের ২৬ নভেম্বর প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধন করা হয়। ভবনের প্রথম তলা ছাদের আয়তন প্রায় দুই হাজার বর্গফুট। এই ছাদ দেখে বাগান করার কথা চিন্তা আসে মফিজ উদ্দীদের মাথায়। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে প্রথম তলার ছাদে ছোট পরিসরে ছাদবাগান শুরু করেন তিনি। ক্রমে ক্রমে বাড়িয়েছেন বাগানের পরিধি। ওই বছর তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ শুরু করেন। সেই সঙ্গে শুরু করেন সবজিখেত। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের সামনে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করেন। ওই স্মৃতিফলকে ইউনিয়নের ১৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম, তাঁদের পিতার নাম এবং গ্রামের নাম লেখা আছে।
ছাদবাগান করার কারণ জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাগান করা আমার শখ। ছাদবাগানটি আমি দৃষ্টিনন্দন করে করার চেষ্টা করেছি। দৈনন্দিন কাজের চাপে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। কাজের ফাঁকে ছাদবাগানে গিয়ে বসলে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাগানের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ নিজেরাই করি। ইউনিয়নে ১০ জন গ্রাম পুলিশ আছেন। তাঁরা বাগানের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন। গাছে কোনো কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় না।
No comments:
Post a Comment