করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বই ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে যশোরের পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। স্মারকলিপির মাধ্যমে তিন দফা প্রস্তবনা সম্বলিত প্রণোদনার এই প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমিতির যশোর শাখা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এমন দাবি জানায়। বুধবার সমিতির জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ ডিসির কাছে এই স্মারকলিপি দেন। তিন দফা এই প্রস্তাবনার মধ্যে সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ঋণসহ অন্যান্য দাবি রয়েছে।
সমিতির দাবিগুলো হলো, বাংলাদেশের পুস্তক ব্যবসা খাতের জন্য কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকার ঋণের বিশেষ প্রণোদন প্যাকেজ ঘোষণা। সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে এই ঋণদানের প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ২৬ হাজার পুস্তক ব্যবসায়ী পরিবারের জন্য এককালীন ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান। যেটি ৬৪টি জেলার জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির মাধ্যমে বিতরণ করা যেতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল কলেজের লাইব্রেরি সমৃদ্ধ করতে একাডেমিক ও সৃজনশীল বই কেনার জন্য ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বিগত দেড় বছর ধরে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা না থাকায় একাডেমিক ও সৃজনশীল বই বিক্রি প্রায় বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রায় ২৬ হাজার বইয়ের দোকান বন্ধ থাকায় বহু প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীররা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সারা দেশের জেলা ও উপজেলায় পর্যায়ের বই বিক্রেতা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অভাব বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। অথচ দেশের অর্থনীতিতে করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সরকার অনেকগুলো প্রণোদন প্যাকেজ ঘোষণা করলেও তাতে পুস্তক সেক্টরের অন্তর্ভূক্তি নেই।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৭ মাসে বাংলাদেশের একাডেমিক এবং সৃজনশীল প্রকাশনা ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠান প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার বিক্রয় বঞ্চিত হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন ও পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা অন্যান্য মাধ্যম থেকে ঋণ নিয়ে সেগুলো পরিশোধ করতে পারছে না। ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে তাদের এখন দিশেহারা অবস্থা।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, বই মেলায় ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। মেলায় লাভ দূরে থাক, কোনও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল নির্মাণ খরচের সমপরিমাণ বিক্রিও হয়নি। ফলে বইমেলার শেষ দিনে মেলা প্রাঙ্গনে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বইমেলায় অনুৎপাদনশীল বিনিয়োগের ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ সহযোগিতা ও সরকারিভাবে ১০০ কোটি টাকার বই ক্রয়ের বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানানো হয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে এই দুঃসময়ে প্রকাশনা খাতকে রক্ষার জন্য সরকার যদি এগিয়ে না আসে, তাহলে ভবিষ্যতে জ্ঞাননির্ভর জাতি গঠন ও শিক্ষিত প্রজন্ম তৈরি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন, সমিতির যশোর জেলা সভাপতি আবুল হাসান সরকার, সিনিয়র সভাপতি মনিরুল হক, সাধারণ সম্পাদক এবিএম জাকির উদ্দীন দোলন, অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম হেলাল প্রমুখ।
No comments:
Post a Comment