পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নারীপাচার এবং সম্প্রতি বাংলাদেশি তরুণীকে পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের অন্যতম মূল হোতা আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফি ও তার সহযোগী ম্যাডাম সাহিদাসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
সোমবার (৩১ মে) থেকে মঙ্গলবার (০১ জুন) সকাল পর্যন্ত র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা ও র্যাব-৩ এর অভিযানে ঝিনাইদহ সদর, যশোরের অভয়নগর ও বেনাপোল হতে নারী পাচার চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাফি (৩০) ও সাহিদা (৪৬) ছাড়া বাকি দুজন হলেন- ইসমাইল সরদার (৩৮) ও মো. আব্দুর রহমান শেখ ওরফে আরমান শেখ (২৬)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানায় র্যাব।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এ চক্রটি বিভিন্ন প্রতারণামূলক ফাঁদে ফেলে এবং প্রলোভন দেখিয়ে নারী ও তরুণীদের পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করত। দেশি-বিদেশিসহ প্রায় ৫০ জন সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে তারা জড়িত রয়েছে। এই চক্রের মূলহোতা রাফি এবং গ্রেপ্তারকৃত অন্য সদস্যরা তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এছাড়া ভারতে গ্রেপ্তারকৃত টিকটক হৃদয় তার অন্যতম সরবরাহকারী বা এজেন্ট। এছাড়া তার আরও এজেন্ট বা সরবরাহকারী রয়েছে।
টিকটক হৃদয় অনলাইনে টিকটক ও বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া গ্রুপের তরুণীদের টিকটক মডেল বানানো ও অন্যান্য প্রলোভন দেখিয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবনে আকৃষ্ট ও অভ্যস্ত করাত। পরবর্তীতে তাদেরকে পাশ্ববর্তী দেশ বা উন্নত দেশে বিভিন্ন মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ বিভিন্ন ধরনের ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বস রাফির মাধ্যমে ভারতে পাচার করত। মূলতঃ যৌনবৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যেই পার্শ্ববর্তী দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে পাচার করা হত। পাচারের পর তাদেরকে বিভিন্ন নেশা জাতীয়/মাদকদ্রব্য সেবন করিয়ে জোরপূর্বক অশালীন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করত যাতে তারা এ ধরনের কাজে বাধ্য হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, ভিকটিমদের বৈধ বা অবৈধ উভয় পথেই সীমান্ত অতিক্রম করানো হত। তারা কয়েকটি ধাপে পাচারের কাজটি সম্পাদন করত।
জিজ্ঞাসাবাদেরাফি আরও জানায়, মূলত বর্ণিত ভিকটিম দুজন বাংলাদেশি নারীকে দেশে পালিয়ে আসতে সহযোগিতা করায় তাকে নির্মম অত্যাচার করা হয় এবং তাকেও বলা হয় সে যদি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তাহলে বর্ণিত ভিডিওটি তার স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে ।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাফির বিগত ৮ বছর ধরে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে গমনাগমন রয়েছে। সে সেখানে ট্যাক্সি ড্রাইভার, হোটেলে রিসোর্ট কর্মচারী ও কাপড়ের ব্যবসা করত। সে বিগত ৫ বছর যাবত নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত হয়। বিগত ২ বছর পূর্বে তার সঙ্গে টিকটক হৃদয়ের পরিচয় ঘটে। সে টিকটক হৃদয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রায় অর্ধশতাধিক তরুণীকে ভারতে পাচার করেছে। টিকটক হৃদয় ছাড়াও তার অন্যান্য এজেন্ট রয়েছে।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ভিকটিমকে পাচারের উদ্দেশ্যে টিকটক হৃদয় প্রলুব্ধ করে। অতঃপর বস রাফি তাকে গত বছরের অক্টোবরে পাচার করে বেঙ্গালুরে নিয়ে সবুজের বাড়ির সেফ হাউসে অবস্থান করায় যেখানে ভিডিওটি ধারণ করা হয় বলে জানায়। বেঙ্গালুরে বস রাফির বেশ কয়েকটি সেফ হাউস রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে তার সেফ হাউস রয়েছে। তন্মধ্যে ম্যাডাম সাহিদার সেফ হাউস অন্যতম। যেখানে বর্ণিত ভিকটিমকে পাচারের পূর্বে অবস্থান করানো হয়েছিল।
বস রাফির অন্যতম নারী সহযোগী ম্যাডাম সাহিদা। তার একাধিক বিয়ে হয়েছিল। সে এবং তার দুই মেয়ে যথাক্রমে সোনিয়া ও তানিয়া বর্ণিত পাচার চক্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও সক্রিয়ভাবে জড়িত। সোনিয়া ও তানিয়া বর্তমানে বেঙ্গালুরে অবস্থান করছে বলে সাহিদা জানায়। ভাইরালকৃত ভিডিওতে তানিয়াকে সহযোগী হিসেবে দেখা গিয়েছে।
সাহিদা বাংলাদেশ এলাকায় একটি সেফ হাউস পরিচালনা করছে। উক্ত বাড়িটিতে বিভিন্ন নারী সংক্রান্ত অবৈধ কার্যক্রম করা হয়। এ জাতীয় ব্যবসায় সে দীর্ঘ ১০ বছর যাবত জড়িত। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত ইসমাইল ও আরমান শেখ মূলহোতা বস রাফির বিশেষ সহযোগী হিসেবে পাচার তদারকি করে থাকে। তারাও বর্ণিত নারী পাচারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে জানায় র্যাব।
No comments:
Post a Comment