করোনা সংক্রমণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মঙ্গলবার (২২ জুন) রাত ১২টা থেকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যাত্রীবাহী রেল যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ জুন) সন্ধ্যায়, ডিবিসি নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এসময় তিনি বলেন, 'যেহেতু ঢাকাকে সারা দেশ থেকে আইসোলেটেড করতে চাওয়া হচ্ছে। সে কারণে ঢাকা থেকে বাংলাদেশের কোথাও কোন ট্রেন আর যাওয়া-আসা করবে না। আজ রাত ১২টা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে যেমন চট্টগ্রাম থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর এ এলাকাগুলোতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক নিয়মে চলবে।'
পরে, রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচেনায় কোভিড ১৯-এর সংক্রমণের বিস্তার রোধকল্পে সরকার গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী ,গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর জেলাসমূহে সার্বিক কার্যাবলী/জনসাধারণের চলাচল ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করায় ঢাকার সাথে অন্যান্য জেলার লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে ২২ জুন, রাত ১২টা হতে আগামী ৩০ জুন, ২০২১ তারিখ মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকার সাথে সারা দেশের যাত্রীবাহী রেল যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের যশোর এবং খুলনাগামী সকল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে, সোমবার (২১ জুন) রেলমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, 'ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছাতে যেসব এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে ট্রেন থামবে না, যাত্রীও উঠাবেও না, নামাবেও না। লকডাউন এলাকা ক্রস করে ট্রেন গন্তব্যে যাবে। একইভাবে অন্যান্য এলাকার জন্যও এই বিধি মেনে ট্রেন চালানো হবে। লকডাউন এলাকার রেলস্টেশন সমূহ বন্ধ থাকবে।'
তার আগে, সোমবার (২১ জুন) করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ২২ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকার আশেপাশের ৭ জেলায় চলাচলে বিধিনিষেধ দেয় সরকার। চলাচলে বিধিনিষেধের আওতায় পড়া জেলাগুলো হলো: নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ। এসময় কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে। এর সাথে বন্দরসমূহের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে বলে জানানো হয়।
এর পরপরই ২২ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা ঢাকা বিভাগের এই সাত জেলায় যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ- বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। জানানো হয়, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি এবং মাওয়া ঘাটে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকবে। এসময় শুধু পণ্যবাহী যানবাহন ফেরিতে চলাচল করতে পারবে।
তারপর, ২২ জুন সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি।
উল্লেখ্য, দেশে করোনায় ২য় ঢেউয়ে আবারো বাড়তে শুরু করেছে মৃতের সংখ্যা। আবারো বেড়েই চলেছে সংক্রমণ হার। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৮৪৬ জন। গত ৬৯ দিনে এটাই একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯.৩৬ শতাংশে। এছাড়া করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দিনেও ৭৮ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
No comments:
Post a Comment