করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে যশোরে কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে সর্বাত্মক লকডাউন। গেল দুদিনের মতো লকডাউনের তৃতীয় দিনে যশোরে কঠোর অবস্থানে ছিলো প্রশাসন। জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তায় মানুষের চলাচল সীমিত করে পুলিশ। তবে কাঁচাবাজার ও মাছ-মাংসের বাজারে সকাল থেকে দুপুর অবধি জনসমাগম লক্ষ্য করা গেছে। যেখানে ছিল না কোন স্বাস্থবিধির বালাই। এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, মানুষ ও যানচলাচল সীমিত করার জন্য জেলা প্রশাসন গেল তিন দিনের অভিযানে ১৩৭টি মামলায় ৮০ হাজার ৮শ’ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় যশোরে লকডাউনের তৃতীয় দিনও সফল হয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মানুষ।
গতকাল শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের তৃতীয় দিনে যশোর শহরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথারীতি কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে। কিন্তু বাজারগুলোতে অনেকটাই শিথিল ছিল বিধিনিষেধ। এছাড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট থাকায় শহরতলী থেকে বিভিন্ন ইজিবাইক ও সিএনজিতে যাত্রী নিয়ে চেকপোস্টের আগে যাত্রী নামিয়ে েিত দেখা যায়। আর পুলিশ দেখলেই সটকে পড়ে এসব চালক। মোটরসাইকেল, রিকশা ও প্রাইভেটকার জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শহরের ভিতরে ঢুকতে দেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শহরের মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড বসিয়ে বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করেন পুলিশ সদস্যরা। সঠিক জবাব দিতে না পারলে বাসায় ফেরত পাঠানো হয়। এদিকে, লকডাউনের অন্যদিনের মতো সকালে কাঁচাবাজার ও মাছ-মাংসের দোকানগুলোতে চলে পুরোদমে কেনাবেচা। দোকানিদের অনেকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। ছিল প্রচুর ভীড়। এমনকি কাঠেরপুল ব্রিজ ও এইচএমএম রোডে মাঝেমধ্যে সাইকেল, মোটরসাইকেল ও রিকশার যানজট দেখা যায়। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে অনেকে যত্রতত্র চলাফেরাও করেন। লকডাউনের তৃতীয় দিন বড় বড় দোকানপাট বন্ধ থাকলেও সকালে এইচএমএম রোড, হাটখোলা রোড, চুড়িপট্টি, জেল রোড বেলতলায় ওষুধ ও মুদির দোকান ছাড়াও অন্যান্য দোকানে শাটার অর্ধেক খোলা রেখে কেনাবেচা করতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। এইচএমএম রোডে ৩০ থেকে ৪০ জন বিক্রেতা ফুটপাতে কাপড় ও জুতার পরসা নিয়ে বসেন। তবে কিছুক্ষণ পরই পুলিশি তৎপরতায় মালামাল গুটিয়ে চলে যেতে বাধ্য হন তারা।
সবুজ হোসেন নামে এক সবজি বিক্রেতা বলেন, মাস্ক পরেই বেচাকেনা করছি। তবে, গরমে দীর্ঘক্ষণ ধরে মাস্ক পরে থাকলে শ্বাসকষ্ট লাগে। তাই কাজের সময় মাস্ক পরি না। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর লোকজন বাজারে টহল দিচ্ছে বলে জানান তিনি। তোফাজ্জল হোসেন মানিক নামে এক কলেজ শিক্ষক বলেন, সরকার লকডাউন দিলেও আমরা সচেতন না। মানুষ অযথা বাইরে বের হচ্ছে। লকডাউন ব্যবস্থা তুলে দিয়ে পথে-ঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর অবস্থানে যাওয়ায় তিনি মতামত দেন। মাখম দাস নামে এক রিকশাচালক বলেন, পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। যাত্রী কম থাকলেও পুলিশের তেমন বাঁধা পাচ্ছেন না বলে দাবি করেন তিনি।
দড়াটানায় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা সুমন ভক্ত জানান, আমরা মুভমেন্ট পাশ ছাড়া কাউকে রাস্তায় বের হতে দিচ্ছি না। তবে গুরুতর অসুস্থ রোগীবাহী গাড়িগুলোকে ছেড়ে দিচ্ছি। তার পরেও মানুষ সচেতন না। অকারণে মানুষ বাইরে বের হচ্ছে। মানুষ নিজে থেকে সচেতন নয়। এ কারণে পুলিশ আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, মানুষ ও যানচলাচল সীমিত করার জন্য জেলা প্রশাসন গেল তিন দিনের অভিযানে ১৩৭টি মামলায় ৮০ হাজার ৮শ’ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী কমিশনার মাহামুদুল হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়ন করতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে শহরের ১২টির মতো ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাঁচাবাজার গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছি। তার পরেও যারা মানছে না; মানার জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
No comments:
Post a Comment