জেলা জজের আদেশ জাল করে শার্শা থানা থেকে একটি ভ্যাসপা মোটরসাইকেল হাতিয়ে নিয়েছেন যশোরের বিতর্কিত আইনজীবী মিজানুর রহমান বিপ্লব। এর আগে তার বিরুদ্ধে বিচার প্রার্থীদের বোকা বানিয়ে টাকা হাতানো থেকে শুরু করে নথি জালিয়াতি, মাদক কেনাবেচা ও সেবনসহ নানা অপরাধমূলক কাজে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে।মাদকসহ একাধিকবার আটকও হয়েছেন তিনি। ধরা খেয়েছেন আদালত থেকে নথি চুরি করতে যেয়ে। বার বার বিচারক ও সমিতির নেতাদের হস্তক্ষেপে রক্ষা পেলেও তিনি যে সুধরোবার পাত্র নন, তা আরও একবার প্রমাণ করলেন আইনজীবী মিজানুর রহমান বিপ্লব।
আদালত সূত্রে জানা যায়, যশোর শহরের খড়কি স্টেডিয়াম পাড়ার মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে আইনজীবী মিজানুর রহমান বিপ্লব গত ৫ জানুয়ারি শার্শা উপজেলার টেংড়া চৌরাস্তা থেকে আটক হন। এসময় তার ভ্যাসপা মোটরসাইকেলের সামনের বক্স থেকে ২২ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনায় মামলা দিয়ে আদালতে চালান করা হয় বিপ্লবকে। মোটরসাইকেলটি শার্শা থানা হেফাজতে রাখা হয়। জামিনে বের হয়ে বিপ্লব গত ২৭ মার্চ আদালতের আদেশ জাল করে শার্শা থানায় উপস্থাপন করে (আদেশ নং এসসি১১০৭/২১)। ওই ভুয়া আদেশে তিনি থানা থেকে ওই ভ্যাসপা মোটরসাইকেল জিম্মায় নেন। যার নম্বর খুলনা মেট্রো হ-০৩-৩৬৯২।
মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পরে শার্শা থানা থেকে আদালতকে অবহিত করা হয়। ২৯ মার্চ আদালত ওই আদেশ মামলার নথিতে সংযুক্তির সময় জানতে পারেন যে আদেশটি জাল। তাৎক্ষণিক বিচারক শার্শা থানার ওসিকে তলব করেন। পরের দিন আদালতে বিষয়টি নিয়ে ব্যাখা দেন ওসি। এই জালিয়াতির কারণে জেলা ও দায়রা জজ আইনজীবী বিপ্লবের বিরুদ্ধে আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহানুর আলম শাহীন বলেন, মিজানুর রহমান বিপ্লব আগে থেকেই সাময়িক বহিষ্কার রয়েছেন। বিপ্লব জালিয়াতি করে একটি মামলার জব্দকৃত মোটরসাইকেল জিম্মায় নিয়েছেন বলে তাদের কাছে তথ্য এসেছে। শিগগিরই তার সনদ বাতিলের জন্য বার কাউন্সিলে সুপারিশ করা হবেও বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে শার্শা থানার ওসি বদরুল আলম খান বলেন, আদালেতের আদেশের মতই হবহু কপি বিপ্লব তাদেরকে দিয়েছিলেন। পরে আদালতে সেটা জাল প্রমাণিত হয়। বিচারক তাকে তলব করেছিলেন। তিনি জবাব দিয়েছেন। একইসাথে ওই মোটরসাইকেল উদ্ধার করে আদালতকে অবহিত করেছেন। আদালতের পরবর্তী নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান ওসি।
আইনজীবী মিজানুর রহমান বিপ্লব বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন। তিনি গত বুধবার চার বোতল ফেনসিডিলসহ বাঘারপাড়া থেকে আটক হন।
এদিকে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক ও বর্তমান কিছু নেতার কারণে বেশ কিছু আইনজীবী নানা অপরাধমূলক কাজে সম্পৃক্ত হয়েও পার পেয়ে যাচ্ছেন। যার খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ আইনজীবীরা। আইন, বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে আইনজীবীদের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। নথি জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে আইনজীবী কাজী মসরুর মুর্শীদ বাপি, আমির হোসেনসহ কয়েকজনকে আদালত থেকে শোকজ করা হয়। তাদের ব্যাপারে সমিতিকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা সাময়িক বরখাস্ততেই থেকে যায় বলে আইনজীবীদের অভিযোগ। তারা বলেন, কয়েকদিনের মাথায় ফের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
সাধারণ আইনজীবীরা পেশাগত মর্যাদা রক্ষা, আইনজীবীদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য মিজানুর রহমান বিপ্লবসহ অপরাধে যুক্ত সমিতির সকল সদস্যকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান।
No comments:
Post a Comment