যশোরের বিভিন্ন এলাকায় জমি কিনতে, বাড়ি করতে ও বাড়ির সংস্কার কাজ করতে গেলেই চাঁদা দাবী করে স্থানীয় চাঁদাবাজ চক্র। চাঁদাবাজিটা রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে এই দুর্বৃত্তরা। চাঁদার টাকা নগদে নিলে চোখে লাগে তাই যশোরের চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট বের করেছে চাঁদাবাজির আধুনিক সংস্করণ। এখন চক্রটি তাদের কৌশল পাল্টে ক্যাশ টাকার বদলে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহের নামে জিম্মি করছে বাড়ির মালিকদের। এবার কৌশলী এইসব চাঁদাবাজদের ‘পাকা ধানে মই দিলো’ জেলা পুলিশ।
যশোরের নির্মনাধীন ৯০ টি বাড়িতে ঝুলছে জেলা পুলিশের সতর্কবার্তা ব্যানার। যশোরের সকল নির্মাণাধীন বাড়িতে এখন পুলিশের কড়া নজর। বাড়ির মালিককে নিজের পছন্দমতো নির্মাণসামগ্রী কেনার ব্যাপারে সহায়তা দিতে এই ব্যানার ঝুলিয়েছেন জেলা পুলিশ।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে যশোর শহরের ৯টি ওয়ার্ডে মোট ৯০টি নির্মানাধীন বাড়ির সামনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি সম্বলিত ব্যানার। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় নির্মানাধীন প্রতিটি বাড়ির সামনে যশোর জেলা পুলিশের টানানো সতর্কবার্তার ‘বিশেষ বিজ্ঞপ্তি’। তাতে বড় করে লেখা ‘এ বাড়ির নির্মাণকাজ জেলা পুলিশ যশোর পর্যবেক্ষণ করছে। এর নিচেই লেখা ‘বাড়িওয়ালা নিজ পছন্দমতো সুবিধাজনক জায়গা থেকে ইট, বালু ও রডসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী ক্রয় করবেন। কেউ ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার নির্মাণসামগ্রী ক্রয় ও বিক্রয়ের বাধ্য করলে অথবা চাঁদা দাবি করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চাঁদাবাজি সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ থাকলে নিম্নলিখিত নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। সেখানে জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’ সার্কেল, কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ এবং বিট ইনচার্জদের সাথে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর সংযুক্ত করা হয়েছে।
শহরের লোন অফিসপাড়া, বেজপাড়া, নিলগঞ্জ, ষষ্টিতলা ও টিভি ক্লিনিক এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, একাধিক নির্মাণাধীন বাড়ির মালিক বলেন, বাড়ি নির্মাণ বা সংস্কার করতে গেলেই হাজির হয় স্থানীয় চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা। চাঁদা নেওয়ার কৌশল বদলে তারা এখন নির্মানসামগ্রী তাদের কাছ থেকে কিনতে চাপ সৃষ্টি করছে। আমাদের পছন্দ বাদ দিয়ে জবরদস্তি করা হয় তাদের কাছ থেকে ইট, বালুসহ সকল নির্মাণসামগ্রী কিনতে। এসব কারণে সব সময় ভয়ে ভয়ে বাড়ি নির্মান কাজ করতে হয় আমাদের। কখনও কখনও এই দুর্বৃত্তরা আমাদের কাজও বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে তাদের কাছ থেকে বেশী দাম দিয়ে নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী ক্রয় করতে হয়। যশোর জেলা পুলিশের এই উদ্যোগকে বাহবা জানিয়েছেন তারা।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তৌহিদুল ইসলাম প্রজন্মের ভাবনা কে বলেন, এসপি স্যার বিট পুলিশিং কে শক্তিশালী করতে চান। বিট পুলিশিং কে শক্তিশালী করতে পারলে স্থানীয় লোকজনের ডিউটি অফিসারের সাথে যোগাযোগের ধারাবাহিকতা তৈরি হবে। যশোরে অনেক ধরণের চাঁদাবাজী হয়। যে অভিযোগগুলো আমাদের নজরে আসে না। বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে সমাজে ঘটনা ঘটলেই আমাদের নজরে আসবে। আইনী সহায়তা দিতে সুবিধা হবে। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে সুনিদির্ষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’ সার্কেল গোলাম রাব্বানী প্রজন্মের ভাবনা কে বলেন, এসপি স্যার চান যশোরে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজীসহ সকল ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড নির্মূল হোক। তারই ধারাবাহিকতায় শহরের ৯টি বিট পুলিশিং কমিটির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে মোট ৯০টি নির্মানাধীন বাড়িতে এই ব্যানার ঝুলানো হয়েছে। এই প্রচারনায় একদিকে চাঁদাবাজী বন্ধ হবে অপরদিকে বিট পুলিশিং কে শক্তিশালী করতে পারবো।
যশোরে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে রাখতে জেলা পুলিশের ব্যপক তৎপরতা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে যশোরে ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন তারা। তারই ধারাবাহিকতায় শহরের পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিনে ৯০ টি বাড়িতে বিশেষ সতর্ক ব্যানার টানিয়ে দিয়েছেন। গত ৩ দিন ধরে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিকদার সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’ সার্কেল গোলাম রাব্বানী, ওসি কোতয়ালী মোহম্মদ মনিরুজ্জামানসহ পুলিশের কয়েকটি টিম যশোরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মাদক বিরোধী জনসচেতনতা প্রচারনা চালিয়েছে। এই প্রচার অভিযানের ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখতে বিট পুলিশিং কমিটিকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর এসব সম্ভব হয়েছে এবং হচ্ছে যশোর জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার এর সদিচ্ছার কারণে।
No comments:
Post a Comment