যশোর পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক নারীর বিরুদ্ধে। শহরের পুরাতন কসবা এলাকায় মাঝে মাঝে বসবাস করা সুইটি ইয়াছমিন লাকি ওরফে মহুয়া নামে ওই নারী এই জালিয়াতি করেছেন।পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত দু’ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। নাছিমা সুলতানা নাম ধারণ করে এবং পৌরসভার পুরাতন কসবা এলাকার নাগরিক পরিচয়ে তিনি এই জালিয়াতি করেছেন। ইতিমধ্যে তার প্রার্থিতা বাতিলের দাবি উঠেছে। যদিও আজ বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন।
সুইটি ইয়াছমিন লাকির একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ১৯৮৬৪১২৪৭০৪০০০০২৬। এই পরিচয়পত্রে তার স্বামীর নাম মাহফুজুর রহমান দেওয়ান। মাতার নাম মারুফা খাতুন। ঠিকানা-পুরাতন কসবা, ডাকঘর যশোর সদর-৭৪০০, যশোর সদর, যশোর পৌরসভা, যশোর উল্লেখ রয়েছে। এই জাতীয় পরিচয়পত্রটি প্রদানের তারিখ রয়েছে ২৪.১০.২০১৩। এখানে জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ৮ নভেম্বর ১৯৮৬।
এই নারী পরবর্তীতে জালিয়াতি করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যেখানে তার নাম লেখা রয়েছে মোছাঃ নাছিমা সুলতানা। স্বামীর নামের জায়গায় পিতার নাম সোহরাব আলী খাঁন লেখা রয়েছে। মায়ের নাম লেখা আছে মিসেস মাহমুদা খাতুন। জন্ম তারিখ ১ ডিসেম্বর ১৯৮৩। এই পরিচয়পত্র নম্বর ৮৪৪৮৮৬৪৭২৫। জালিয়াতি করে তৈরি করা জাতীয় পরিচয়পত্রে ঠিকানা লেখা রয়েছে পুরাতন কসবা গাজীর ঘাট রোড, ডাকঘর : যশোর-৭৪০০, যশোর সদর, যশোর পৌরসভা, যশোর। এই পরিচয়পত্র প্রদানের তারিখ ১৩.০৮.২০২০। জন্মস্থান : যশোর লেখা রয়েছে এখানে।
এই নারীর রয়েছে একাধিক পাসপোর্টও। প্রথমে একটি পাসপোর্ট করেন তিনি। হাতেলেখা ওই পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এখানে তিনি নাছিমা সুলতানা উল্লেখ করে স্বাক্ষর করেন। এরপর তিনি সুইটি ইয়াছমিন লাকি নামে আরেকটি পাসপোর্ট করেছিলেন। যার পাসপোর্ট নম্বর বিটি ০৫৩৭৮৯৯। জন্ম তারিখ রয়েছে ০৮.১১.১৯৮৬। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৮৬৪১২১৬০৪২০৩৩৫। পাসপোর্ট প্রদানের তারিখ রয়েছে ১৬.০৫.২০১৮। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ১৫.০৫.২০২৩। পিতার নাম রয়েছে মাহবুবুর রহমান খান। মায়ের নাম মারুফা রহমান, স্থায়ী ঠিকানা: নওদাগ্রাম, নওদাগ্রাম, যশোর মেইন পোস্টঅফিস, কোতোয়ালি, যশোর। মাত্র সাত মাস ১৪ দিনের মাথায় সুইটি ইয়াছমিন লাকি নামে আরও একটি পাসপোর্ট করেন তিনি। যার নম্বর বিটি ০৪২৬১৫২। এই পাসপোর্টটি প্রদানের তারিখ ছিল ১৪.০৬.২০১৮। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ১৩.০৬.২০২৩।
এরআগে ২০১২ সালে আরও একটি পাসপোর্ট করেন সুইটি ইয়াছমিন লাকি নাম দিয়ে। পাসপোর্ট নম্বর এডি ৭৬০৩৬৭৬। ওই পাসপোর্টটি প্রদানের তারিখ ছিল ১৯.০৯.২০১২। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ১৮.০৯.২০১৭। সেখানেও ঠিকানা ছিল নওদাগাঁ।
সর্বশেষ, নাছিমা সুলতানা নামে এই নারী ২০২০ সালের ৩ মার্চ রবিউল ইসলাম রবি নামে এক ব্যক্তির কাছে নওদাগ্রাম মৌজার ৯.৩২ শতক জমি তিন লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্য দেখিয়ে বিক্রি করেন। যার দলিল নম্বর ১৯৩০/২০। ওই দলিলে তার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে গ্রাম: পাগলাদাহ, ডাকঘর: নওদাগ্রাম, উপজেলা: কোতোয়ালি ও জেলা: যশোর উল্লেখ করা হয়েছে। দলিলে নাছিমা সুলতানার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৬৪৪৮৮৬৪৭৪৫।
একজন নারীর একাধিক পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একেক জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবা ও মায়ের নাম একেক রকম। আলাদা নিজের নামও। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, পুরাতন কসবার ঠিকানায় যে জাতীয় পরিচয়পত্র তিনি করেছেন সেটি জাল। কেবলমাত্র সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রার্থী হওয়ার জন্য তিনি এই অপকর্ম করেছেন বলে সূত্রের দাবি।
নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, কোনো ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে হলে অবশ্যই ওই ওয়ার্ডের ভোটার হতে হবে। তা না হলে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না। সেই হিসেবে কথিত নাছিমা সুলতানা কোনোভাবেই প্রার্থী হতে পারবেন না সংরক্ষিত দু’ নম্বর ওয়ার্ডে।
এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার হুমায়ুন কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো ওয়ার্ডের ভোটার হওয়া ছাড়া কোনো প্রার্থী ওই ওয়ার্ডে কোনো পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।
এ ব্যাপারে কাউন্সিলর প্রার্থী নাছিমা সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,যে অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো মিথ্যা। সব ডকুমেন্টস আছে। ন্যাশনাল আইডি কার্ডে ভুল নাম আসার কারণে তা সংশোধন করেছি।
সুত্রঃ গ্রামের কাগজ
No comments:
Post a Comment