কেশবপুর পৌরসভা নির্বাচন প্রথমবারের মতো ভোট দিবেন তৃতীয় লিঙ্গের পাঁচজন ভোটার - Jashore Tribune

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

as

a1

Wednesday, February 24, 2021

কেশবপুর পৌরসভা নির্বাচন প্রথমবারের মতো ভোট দিবেন তৃতীয় লিঙ্গের পাঁচজন ভোটার

 


আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি রোববার যশোরের কেশবপুর পৌরসভার নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিবেন তৃতীয় লিঙ্গের পাঁচজন ভোটার। প্রথমবারের মতো ভোট দিয়ে তারা পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন।   

গত বছরের ২ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবসে নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে সারা দেশে তিনশ’ ৬০ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের নাম প্রকাশ করা হয়। তাদের মধ্যে কিনারী বয়াতী, পিংকি মোড়ল, সোনিয়া খান, সোনালী সরকার ও নদী রহমান কেশবপুর পৌরসভার মধ্যকুল ওয়ার্ডের ভোটার হিসেবে স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন। ওদের কারও বাড়ি ভোলা, কারও নরসিংদী। আবার কেউ কেউ এসেছেন চাঁদপুর এবং খুলনা থেকে। এতদিন ভাসমান জীবনযাপন করলেও বর্তমানে তারা জমি কিনে কেশবপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন। এদের বসবাস পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যকুলের আমতলা এলাকায়। 

মধ্যকুলে বসবাসরত হিজড়াদের গুরুমা কিনারি বয়াতী (৭১) বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পিংকি, প্রিয়াংকা, সোনিয়া, সোনালী, শোভা, নদী, জোসনা, লাকীসহ অনেক হিজড়া এসে মধ্যকুলে তাদের আস্তানায় থাকেন। কিন্তু তাদের জীবনধারণ করতে যেটুকু সহযোগিতা প্রয়োজন তা তারা পান না। যখন কেশবপুর প্রেসক্লাবের পাশে ভাড়া বাসায় থাকতেন তখন সাংবাদিকদের সহযোগিতায় সমাজসেবা অফিস থেকে তার একটি প্রতিবন্ধী কার্ড হয়েছিল। ২০১১ সালের ২ মার্চ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিদা সুলতানা তার হাতে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডটি তুলে দিয়েছিলেন। এরপর আর কারো কোনো কার্ড হয়নি। যে কারণে বৃদ্ধ বয়সেও অসুস্থ শরীর নিয়ে তাকে এখনো গ্রামে যেতে হয়। হিজড়াদের মধ্যে কলারোয়ায় নির্বাচিত কাউন্সিলর দিথি ও কোটচাঁদপুরের ভাইস চেয়ারম্যান পিংকির কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আল্লাহ বঁচিয়ে রাখলে আগামী পৌর নির্বাচনে তার নাতনি সোনিয়াকে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী করবেন।    
এ বিষয়ে সোনিয়া বলেন, করোনাকালে প্রেসক্লাব এলাকায় ঘরবন্দি অবস্থায় কঠিন দুর্বিসহ জীবন কেটেছে তাদের। এ সময় সঞ্চিত অর্থ ও গয়না বিক্রি করে জীবন চালিয়েছেন তারা। মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় বাসা-বাড়ির আঙিনায় পৌরসভা মশক নিধন ওষুধ ছিটানো হলেও হিজড়া বলে তাদের বাসায় কেউ কোনো দিন যায়নি। আর্থিক কারণে এবার না পারায় আগামী পৌর নির্বাচনে তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী হবেন। মেয়র রফিকুলসহ অনেক প্রার্থীই তাদের কাছে ভোট চেয়েছেন। তারা মধ্যকুল মহিলা আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দিবেন।          
উপজেলা নির্বাচন অফিসার বজলুর রশিদ জানান, ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ পরিচয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে এ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন করা হয়। পরের বছর ভোটার নিবন্ধন বিধিমালা প্রণয়নের সময় নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন ফরমে লিঙ্গ পরিচয় হিসেবে হিজড়া যুক্ত করে। ২০১৮ সালে কেশবপুরের চার-পাঁচজন হিজড়া  নিবন্ধনের মাধ্যমে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছে।  
কেশবপুর উপজেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবুবকর সিদ্দিকী বলেন, হিজড়ারা পরিবার ও সমাজে নানাভাবে অবহেলিত, অনাকাক্সিক্ষত এবং অবাঞ্ছিত। তারা এতদিন সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। জীবনধারণের সঠিক দিক নির্দেশনা না থাকায় বেঁচে থাকার তাগিদে অবাঞ্ছিত কর্মকান্ডে অনেকের বিরাগভাজন হয়েছে। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হলে তারা আলোর পথ দেখবে। 

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad