যশোরের চৌগাছায় টাকা চুরির ঘটনায় নির্যাতনে প্রাণ গেলো গৃহবধূ হাজেরা বেগমের (২৭)। পিতাপক্ষের দাবি, কবিরাজের আয়না ভারন বিশ্বাস করে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।তবে স্বামীর পরিবারের দাবি, চুরির ঘটনা প্রমানীত হওয়ায় লোক লজ্জায় হাজেরা বেগম আত্নহত্যা করেছেন। তিনি চৌগাছা উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়নের কোটালিপুর গ্রামের ইরাদ আলীর ছেলে মিজানুর রহমানের স্ত্রী।
এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর শাশুড়ি ও ননদকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
অভিযোগ মতে, যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের জগহাটি গ্রামের হয়রত আলীর মেয়ে হাজেরা খাতুনকে ৭ বছর আগে চৌগাছা উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়নের কোটালিপুর গ্রামের ইরাদ আলীর ছেলে মিজানুর রহমানের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ মিলে হাজেরাকে অত্যাচার শুরু করে। প্রায় মারপিট করতে থাকে তারা। কয়েক দফা হাজেরা বাপের বাড়ি চলে আসলেও মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে জামাইয়ের যৌতুকের টাকা দিয়ে মেয়েকে আবারো শ্বশুর বাড়ি রেখে আসেন হাজেরার বাবা। এরই মাঝে হাজেরার গর্ভে জম্ম নেয় ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান। মেয়ের কথা ভেবে হাজেরা স্বামী শাশুড়ি ও ননদের সব অত্যাচার মেনে সংসার করতে থাকে। মেয়েটির বয়স ২ বছর হতেই আবারো গর্ভবতী হন হাজেরা। হাজেরার বাবার অভিযোগ, সম্প্রতি তার জামাইয়ের ঘর থেকে ১১ হাজার টাকা চুরি হয়ে যায়। এই ঘটনায় তার মেয়ে হাজেরাকে সন্দেহ করেন তার জামাইয়ের পরিবারের লোকজন। তারা তাকে বেদম মারপিট করতে থাকে দফায় দফায়। পরে চৌগাছা উপজেলার তেতুুলবাড়িয়া গ্রামের ভন্ড কবিরাজ ফজলুর নিকট গেলে তিনি আয়না ভারনে হাজেরার নাম বলেন। এরপর বাড়ি এসে তারা আবারো মারপিট করতে থাকে হাজেরাকে। সে টাকা নেয়নি বলতে জোর করে তারা তাকে ৫ জানুয়ারি বিষ খাইয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে হাজেরার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে চৌগাছা হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই তাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পরদিন তার অবস্থা আরো খারাপ হওয়াই তাকে খুলনা মেডেকেলে রেফার করা হয়। সেখানে ডাক্তাররা তার অবস্থা বেগতিক দেখে তখনই ঢাকা মেডিকেলে নিতে বলেন। পরে তাকে ঢাকা না নিয়ে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে যশোর ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করেন ৭ জানুয়ারি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার হাসপাতালে মারা যান হাজেরা।
এদিকে, হাজেরার মৃত্যু সংবাদ শুনে হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে স্বামী মিজানুর, তার মা আবিরন নেছা ও বোন রেখা খাতুন রওনা হন হাজেরার বাপের বাড়ি। লাশ রেখে স্বামী মিজানুর পালাতে পারলেও পালাতে পারেনি তার মা ও বোন। এলাকাবাসী তাদের আটক করে রাখে। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়ির ইনর্চাজ এস আই সুকুমার কুন্ডু পরিস্থিতি শান্ত করে আবিরন নেছা ও রেখা খাতুনকে পুলিশি হেফাজতে নেন। খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান নিহতের বাড়িতে যান। পরে পুলিশ লাশ ময়না তদন্তের জন্য যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, নিহতের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে প্রায় মারপিট করতো বলে জানা গেছে। তবে তিনি আত্নহত্যা করেছেন, নাকি তাকে জোর করে বিষ খাইয়ে দিয়েছে, সেটা তদন্ত না করে বলা যাবে না।
No comments:
Post a Comment