যশোরের অভয়নগরে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় দুটি ভেজাল মধু তৈরির কারখানা থেকে পাঁচ মণ ভেজাল মধু ও মধু তৈরির উপকরণ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই কারখানা মালিকসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের জিয়াডাঙ্গা গ্রামে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করা হয়। উদ্ধার করা হয় পাঁচ মণ ভেজাল মধু ও মধু তৈরির উপকরণ।
আটক তিনজন হলেন- জিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত ইয়াকুব্বার সরদারের ছেলে কারখানা মালিক জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), একই গ্রামের আবুল সরদারের ছেলে কারখানা মালিক রেজাউল ইসলাম (৩৪) ও তাদের সহযোগী প্রেমবাগ ইউনিয়নের গাবখালী গ্রামের হাসান আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (২১)।
জিয়াডাঙ্গা গ্রামবাসী জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগের একজন প্রভাবশালী নেতার সহযোগিতায় গ্রামের জাহাঙ্গীর ও রেজাউল দীর্ঘদিন ধরে নিজ বাড়িতে ভেজাল মধু তৈরি করে আসছে। যে মধু দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিনকে জানালে বুধবার সকালে ইউনিয়নের মাগুরা বাজারে স্থানীয় বাজার কমিটির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে অবস্থান করেন চেয়ারম্যান।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি ভ্যানে করে প্রায় এক মণ ভেজাল মধু নওয়াপাড়া বাজারে নেয়া হচ্ছিল। এ সময় চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন ও বাজার কমিটির নেতারা ভ্যানে থাকা মধুসহ তিনজনকে ধরে অভয়নগর থানা পুলিশে খবর দেন।
ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন ধরে জিয়াডাঙ্গা গ্রামের একটি চক্র ভেজাল মধু তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবার করে আসছিল। স্থানীয় মাগুরা বাজার কমিটির সহযোগিতায় ভেজাল মধুসহ তিনজনকে আটক করা সম্ভব হয়। পরে তাদের থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার এসআই গৌতম কুমার মণ্ডল বলেন, উপজেলা প্রেমবাগ ইউনিয়নের জিয়াডাঙ্গা গ্রাম থেকে ভেজাল মধু তৈরির কাজে জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আটক জাহাঙ্গীর আলমের স্বীকারোক্তিতে তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় তার বাড়িতে ভেজাল মধু তৈরি কারখানার সন্ধান মেলে। উদ্ধার করা হয় প্রায় সাড়ে চার মণ তৈরিকৃত ভেজাল মধু, একটি ডিজিটাল স্কেল, মধু তৈরির উপকরণ হিসেবে চিনি, চিনির পাঁচটি খালি বস্তা, ফিটকিরি, পানি ও নষ্ট কিছু মৌচাক।
তিনি জানান, দুপুরে রেজাউল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় প্রায় আধামণ ভেজাল মধু। ভেজাল মধু ও জব্দকৃত মালামালসহ তিনজনকে থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
আটক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাগুরা বাজারে ধরা পড়া ৯৫ কেজি মধু কুমিল্লা জেলায় পাঠানো হচ্ছিল। স্থানীয় এক প্রভাবশালী যুবলীগ নেতার সহযোগিতায় তারা এ ভেজাল মধুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। নিজ বাড়িতে কয়েক বছর ধরে মধু তৈরির ব্যবসা করছেন বলেও তিনি জানান।
মধু তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চিনি, ফিটকিরি, পানি ও নষ্ট মৌচাকের মিশ্রণের পর তা আগুনে জ্বালানো হয়। এরপর তৈরি করা হয় ভেজাল মধু। এক কেজি মধু তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ১০০ টাকা। তৈরিকৃত মধু প্রতি কেজি পাইকারি বিক্রি করা হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
No comments:
Post a Comment