অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কারণে যশোরের বিখ্যাত খেজুরের পাটালির সুনাম হারাতে বসেছে। মৌসুমের শুরুতে শহরের অলি,গলি ও দোকানে যে পাটালি এবং গুড় পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগই ভেজাল। চিনি মিশিয়ে খেজুরের পাটালি তৈরি করে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ধরনের প্রতারণায় নতুন করে যোগ হয়েছে অনলাইন প্লাটফরম। ফেসবুকে পেইজ খুলেই অর্ডার নেয়া হচ্ছে নলেন গুড়-পাটালির। অভিযোগ উঠেছে, ওই পাটালি গত বছরের গুড় দিয়ে তৈরি। এখনো রস তেমন পাওয়া যাচ্ছে না,তাহলে নলেন পাটালি কীভাবে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে-প্রশ্ন ক্রেতাদের। আবহমানকাল থেকে দেশব্যাপী প্রচলিত রয়েছে ‘যশোরের যশ,খেজুরের রস’ বচনটি। শীতের শুরুতে খেজুরের রস, গুড় আর পাটালির জন্য দেশের মানুষ উদগ্রীব হয়ে থাকে স্বাদ নিতে। যে কারণে যশোরের খেজুর রস ও গুড় এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী। শহরে থাকা মানুষের সমাগম ঘটে গ্রামের স্বজনদের কাছে। শীতের পিঠা-পায়েস খাওয়াই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
এই সুনামকে পুঁজি করে ব্যাঙের ছাতার মতো সোস্যাল মিডিয়ায় পেইজ খুলেই গুড়-পাটালির ব্যবসায় নেমে পড়ছেন কিছু ভুইফোঁড় উদ্যোক্তারা। যা নিয়ে চরম বিভ্রান্তিতে ক্রেতারা। কারণ বর্তমানে বাজারে এখনো নতুন পাটালি ওঠেনি। অথচ যশোর থেকে মণ মণ পাটালি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, নতুন রস থেকে তৈরি নলেন গুড়-পাটালিতে যে সুগন্ধ থাকে, তার কোনোটাই নেই এখনকার পাটালিতে। তাহলে এ ধরনের মণ মণ ভেজাল পাটালি কোথা থেকে আসছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, যশোরাঞ্চলে গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া,গাছিদের অনাগ্রহ ও ন্যায্যমূল্যের অভাবে কিছুটা ভাটা পড়েছে এই শিল্পে। নানা সংকটের মধ্যেও এই অঞ্চলের খেজুরের পাটালি আর গুড়ের উৎপাদন এবং বিক্রি চলছে। তবে, উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকার কারণে যশোরের ঐহিত্যবাহী এ গুড়-পাটালি নিয়ে প্রতারণার শেষ নেই। যা নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা চলছে। যশোরের সুনাম নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি করেছেন অনেকেই। প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অনেক মানুষ।
বাঘারপাড়ার খাজুরার যাদবপুর গ্রামের শাহজাহান মোল্লা ও মাঝিয়ালী গ্রামের আব্দুস সাত্তার নামে দু’জন গাছি জানান, অরজিনাল নলেন পাটালি বাজারে আসতে এখনো ১০-১২দিন সময় লাগবে। কারণ শীত বেশি না পড়লে নলেন পাটালি তৈরি করা যায় না। একাধিক গাছি জানিয়েছেন, খেজুরের রস যখন জ্বালানো হয়, তখন আখের গুড়ের ‘মুচি’ (পাটালির মতো শক্ত) ও পুরনো গুড় (উলা গুড়) মিশিয়ে ঘন করা হয়। এরপর তাতে চিনি মিশিয়ে ‘বীজ’ করে পাটালি তৈরি করা হয়। পাটালির গন্ধ আনতে তাতে বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করে তারা। এরপর সেই পাটালি বা গুড়কে খাঁটি নলেন বলে ক্রেতাদের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ৫০ টাকা কেজি দরের চিনি আর ৭০ টাকা দরের পুরনো নষ্ট গুড় দিয়ে তৈরি এসব পাটালি দু’ থেকে তিনশ’ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
যশোরের বসুন্দিয়া এলাকার গাছি মিজানুর শেখ বলেন, তাদের এলাকায়ও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা এই ভেজাল পাটালি তৈরি করে। তারা কম দামে পুরানো গুড় কিনে চিনি, সেন্ট আর পাটালির রঙ ঠিক রাখতে এক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করে। পরে তা নলেন গুড় বলে চালিয়ে দেয়া হয় বলে মন্তব্য তার।
সংগৃহীত ঃগ্রামের কাগজ
No comments:
Post a Comment