যশোরে বিরাজ করছে উত্তপ্ত পরিবেশ। বাড়ছে খুন, চুরি ছিনতাই হত্যাচেষ্টা। যশোর শহর ও শহরতলীতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের মহড়াও চলছে। তবে হত্যাসহ ঘটে যাওয়া নানা অঘটনে যশোর পুলিশ দ্রুততার সাথে জড়িতদের শনাক্ত ও আটকে সাফল্য দেখিয়েছে, কুড়িয়েছে মানুষের সন্তুষ্টি।গত কয়েক সপ্তাহে চাঞ্চল্যকর ৫ হত্যাকান্ড ও কয়েক ডজন ছিনতাই ও চুরির ঘটনায় গোটা যশোর জুড়ে প্রভাব পড়েছে। এ ব্যাপারে আইনশৃংখলা বাহিনীকে আরো সতর্ক ও অ্যাকশানে থাকার আহবান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ।
১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় ঢাকুরিয়া ও বলরামপুরের মধ্যবর্তী নিউসোনা ব্রিক্সের পাশে কুপিয়ে হত্যা করা হয় জয়ন্তা গ্রামের নিকমল মোল্লার ছেলে আব্দুল আহাদ মোল্লা (২২) ও প্রবাসী আক্তার হোসেন গাজীর ছেলে বাদল মাহমুদকে (২২)। নিহতরা দুজন স¤পর্কে প্রতিবেশি চাচাতো ভাই ছিলেন।
২৩ অক্টোবর রাতে যশোর শহরের কারবালা সিএন্ডবি রোডের পাশে হত্যা করা হয় মণিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা বজলুর রহমানের ছেলে মান্নাতকে। তিনি যশোরের বকচর বিহারী কলোনীর গোলাম মোস্তফার বাড়ি ভাড়া থাকতেন। ২৪ অক্টোবর তার মা আনোয়ারা বেগম কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন ৫ জনকে আসামি করে।
২৪ অক্টোবর রাতে চুড়ামনকাটি-কাশিমপুর সড়কের ঘোনা গ্রামের রাম প্রসাদের মেহগনি বাগনের নিচে বুড়ি ভৈরব নদ পাড়ে গলা কেটে হত্যা করা হয় বাগডাঙ্গার কাঠ ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফাকে। খুনের ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছেন স্ত্রী সালমা বেগম।
গত ৩ নভেম্বর বিকেলে চিহ্নিত মাদক কারবারীদের হাতে খুন হন যশোরের মোমিননগর নওদাঁগা গ্রামের মকসেদ আলী সড়কের কাঠি মিয়ার ছেলে প্রাইভেট চালক আব্দুল কুদ্দুস (৪৮)। ছেলের পরিচিত ৭/৮ জন মাদক কারবারী ছুরিকাঘাত করে তাকে হত্যা করে। এতে গুরুতর আহত হয় তার ছেলে।
গোলাম মোস্তফা খুনের ঘটনায় জড়িত শনাক্ত করে তার ব্যবসায়ীক পার্টনার আব্দুল্লাহসহ দু’জনকে আটক করে। আর পরকীয়া সংক্রান্ত শত্রুতায় স্কেভেটর চালক ইসরাফিল হোসেন মান্নাতকে (৪২) খুন করা হয় বলে তথ্য উদঘাটন করে জড়িত ৭ জনকে আটক করেছে। মণিরামপুরের আহাদ বাদল জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন করে মানিক নামে একজনকে আটক করা হয়। হত্যাকাণ্ডগুলোর ক্লু উদঘাটন আসামি শনাক্ত ও আটকে পুলিশ সাফল্য অর্জন করছে ঠিকই, কিন্তু হত্যাকাণ্ড কমাতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিছিন্ন ঘটনা বলে পুলিশ দাবি করলেও যশোরের সার্বিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত বলে দাবি বিভিন্ন মহলের।
এরপর আবার চুরি ছিনতাই বেড়েছে। একাধিক হত্যাচেষ্টা ঘটনা ঘটছে। ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় যশোর শহরের খড়কি বর্মণপাড়ায় প্রতিপক্ষরা হামলা চালিয়ে দু’জনকে হত্যা চেষ্টা চালিয়েছে। গুরুতর অবস্থায় তারা যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এরা হচ্ছেন, ওই এলাকার সিদ্দিক আলীর ছেলে পিকুল হোসেন (১৮) ও আব্দুল মাজিদের ছেলে আলম (৪০)।
২৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮ টার দিকে তার দোকানে রেলগেটে মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ায় মিন্টু খাঁ (৩০) নামে এক মোবাইল দোকানীকে পিটিয়ে জখম ও দোকান লুটপাট করেছে একটি চক্র। ভুক্তভোগী রায়পাড়ার শাহিন খাঁর ছেলে। এ ঘটনায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। রেলগেট পশ্চিম পাড়ার মাদক কারবারী আল আমিন, ডালিম, লুতু, মিতু ও লাভলী গং এ ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ ওঠে। পরে স্থানীয়ভাবে ঘটনার মিমাংসা হয়।
৩ নভেম্বর যশোর শহরের খড়কি দক্ষিণ পাড়ায় মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ায় ইমরান হোসেন (২৪) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে মারপিট ও ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। সে ওই এলাকার হোসেন আলীর ছেলে। গুরুতর অবস্থায় যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ১ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১ টায় যশোর সদর উপজেলার হালসা এলাকায় চিহ্নিতরা মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে মারপিট ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে একটি পরিবারের। এ ঘটনায় তিনজনের নামসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনের নামে মামলা হয়। ২৭ অক্টোবর বিকেলে যশোরে এক নির্মাণ শ্রমিকের বাইসাইকেল ও মালামাল চুরি করা হয়। ২৪ অক্টোবর বিকেলে যশোর শহরের জজকোর্ট মসজিদের গেটের সামনে থেকে একটি ইজিবাইক ও রিকশা চুরি হয়।
এভাবে গত এক মাসে কয়েক ডজন চুরি, ছিনতাই, হামলা, হত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। আলোচিত অস্ত্রধারী ছিনতাইকারী, উঠতি সন্ত্রাসী সংঘবদ্ধ চোর চক্রের উৎপাত বেড়েই চলেছে। এতে করে বিব্রত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে মানুষ।
এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথেই পুলিশ অ্যাকশানে নামছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডের সবগুলোতেই তদন্ত ও আটক উদ্ধারে পুলিশ সাফল্য দেখিয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। ওই সব অনাকাঙ্খিত ঘটনার যাতে পূণরাবৃত্তি না হয় সে জন্য পুলিশি টহল বাড়নো হয়েছে। চুরি ছিনতাই রোধেও কাজ করছে পুলিশ। মোবাইল টিম সক্রিয় করা হয়েছে। হোন্ডা টিমও মাঠে রয়েছে। এরপরও জনসাধারণের সহায়তা প্রয়োজন। সমন্বিতভাবে আইনশৃংখলা সমুন্নত রাখা সম্ভব হবে।
সুত্রঃ গ্রামের কাগজ
No comments:
Post a Comment