অন্যের কৃতিত্ব নিজের দাবি করে সংবর্ধনা নিয়ে ফের বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গবেষকদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের ২৬ জন শিক্ষক-গবেষক। কিন্তু সেই তালিকায় যবিপ্রবির ভিসির নাম না থাকলেও শনিবার তিনি ক্যাম্পাসে সংবর্ধনা নিয়েছেন।
এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি যশোরে আসলে তার সামনে নিজেকে বিশ্বের সেরা গবেষক হিসেবে উপস্থাপন করেন ভিসি আনোয়ার হোসেন নিজেই।
এদিকে, শনিবার (২১ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ট গবেষক হিসেবে সংবর্ধনা গ্রহণ করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে ডিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি বিকৃত করে তিনি উচ্চ আদালতের ভর্ষণার শিকার হন।
জানা যায়, বিষয়ভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রমে অবদানের ভিত্তিতে গবেষকদের এক বৈশ্বিক ডাটাবেজ তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা থেকে বিশ্বের দেড় লাখেরও বেশি গবেষক বিষয়ভিত্তিক এ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। বিশ্বসেরা গবেষকদের এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের ২৬ জন শিক্ষক ও গবেষক। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএলওএস বায়োলজি জার্নালে সম্প্রতি এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। জার্নালে যে ২৬ জন বাংলাদেশী গবেষকের নাম উঠে এসেছে সেখানে প্রফেসর আনোয়ার হোসেন নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক প্রফেসর রয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির গণিত বিভাগের প্রফেসর ছিলেন। তার গবেষণার বিষয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। সেই গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং বিশ্বের সেরা গবেষকদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন প্রফেসর আনোয়ার হোসেন।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের তালিকাটিতে তিনি ২০১৭ সালে স্থান করে নিয়েছিলেন এবং এবার প্রকাশিত তালিকাটিতে ৪৬৩তম বিজ্ঞানী হিসাবে স্থান পেয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বসেরা বিজ্ঞানী প্রফেসর আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ সাইন্স একাডেমির ফেলো হিসাবে কাজ করছেন। তিনি এক সময় যুগকে প্রফেসর হিসাবে কর্মরত ছিলেন ।
গত ১৪ নভেম্বর যবিপ্রবিতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আসলে তার সামনে বিষয়টি নিজের গবেষণাপত্র দাবি করে বক্তব্য দেন ভিসি আনোয়ার হোসেন। আর এই কৃতিত্বের জন্য শনিবার তাকে শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনাও দেয়া হয়। যদিও ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন একজন অনুজীব বিজ্ঞানী এবং তার গবেষণার বিষয় মলিকিউলার বায়োলজি। জার্নালে যে বিষয়ের উপর গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে তার সাথে ভিসির গবেষণার বিষয়ের কোন মিল নেই। বিষয়টি স্বীকারও করছেন ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আমার গবেষণার সাথে জার্নালে প্রকাশিত গবেষনার মিল নেই। তবে গণিত বিভাগের প্রফেসর আনোয়ার হোসেন অনেক আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছেন। তাই একটা কনফিউজ তৈরি হয়েছে। তালিকায় থাকা প্রফেসর আনোয়ার হোসেন আমি নাকি তিনি সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। কয়েক মাস পর আপডেট আসলে বিষয়টি পরিস্কার হবে।’
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক প্রফেসর আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সম্ভবত খবর পেয়েই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি লাফ দিয়ে উঠেছেন। বিষয়টি তলিয়ে দেখেন নাই। দেখলে বুঝতে পারতেন তার গবেষণার বিষয় মলিকিউলার বায়োলজি। আর জার্নালে যেটা প্রকাশিত হয়েছে সেটা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। তার গবেষণার বাইরের বিষয়। উনার তরফ থেকে একটি ভুল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তার একটি স্টেটমেন্ট দেয়া উচিত, দুঃখ প্রকাশ করা উচিত। সেটা উনার জন্য ভালো হবে। আমি চাইনা তার কোন সম্মানহানী হোক।’
এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ সাইন্স একাডেমির ফেলো প্রফেসর আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যচর্চার সময় নোবেল পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি মাথায় আনেননি। কাজী নজরুল ইসলাম নাম-যশ’র জন্য সাহিত্যচর্চা করেননি। আমরা যারা গবেষণা করি, আমাদের সার্থকতা, সেই গবেষণা মানুষের কাজে আসলে। এখানে কী স্বীকৃতি আসলো আর কে স্বীকৃতি দিল এটা নিয়ে আমি ভাবি না। তবে সবাইকে সত্যের উপর থাকা উচিত।’
No comments:
Post a Comment