যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া গ্রামের পুতুল (১৬) ভালবেসে একবছর আগে বিয়ে করেন ঝিকরগাছা উপজেলার কাউরিয়া ঋষিপাড়ার প্রদীপকে (২২)। কিন্তু সেই স্বামীর সামনে অগ্নিদগ্ধ হলেও পুতুলকে তিনি বাঁচাতে আসেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশেষে বুধবার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে চার মাসের অন্ত:সত্ত্বা পুতুলের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার স্বামী প্রদীপকে আটক করেছে পুলিশ।
পুতুলের স্বজনদের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে চোখের সামনে অগ্নিদ্বগ্ধের এ ঘটনা ঘটালেও তাকে রক্ষা না করে বসে ছিলেন পুতুলের নেশাগ্রস্ত স্বামী। অবশ্য স্বামী ও তার পরিবারের দাবি, রাগের মাথায় আত্মহত্যা করেছে পুতুল এবং তাকে রক্ষা করতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছে স্বামী প্রদীপও।
পুতুলের মা পুষ্পরাণী দাস ও কাকা সঞ্জয় দাস জানান, ‘প্রদীপ ও তার পরিবার ১৪ বছর আগে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে সনাতন ধর্ম গ্রহণ করেন এবং প্রায় একবছর আগে পুতুলকে বিয়ে করেন প্রদীপ। বিয়ের পর থেকেই পুতুলকে নির্যাতন চালাতো নেশাগ্রস্ত প্রদীপ। সর্বশেষ প্রতিবেশী টিউবয়েলে যাওয়া নিয়ে ঝগড়া হওয়ায় অন্ত:সত্ত্বা পুতুলকে সেখানে যেতে নিষেধ করেছিল তার স্বামী। কিন্তু পুতুল রাজি না হওয়ায় বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তাকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুল লাগানোর কথা বলে প্রদীপ। তার কথায় নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় পুতুল। পুতুলের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ঘরের দরজা খুলতে বললেও প্রদীপ ছিল নিশ্চুপ। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখা যায়- পুতুল আগুনে জ্বলছে আর প্রদীপ খাটে বসে সিগারেট টানছে। পরে লোকজন পানি নিয়ে অগুন নেভানোর চেষ্টা করলে তারপর প্রদীপও পুতুলের আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। এতে প্রদীপের হাত পুড়ে যায়।’
প্রতিবেশী জিতেন্দ্রনাথ দাস ও মৌসুমি দাস বলেন, মঙ্গলবার রাতে প্রদীপ ও তার স্ত্রী পুতুলের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছিল। একপর্যায়ে তাদের চিৎকার শুনে বাইরে এসে তারা দেখেন ঘরের মধ্যে আগুন জ্বলছে। এসময় প্রতিবেশিরা তাদের উদ্ধার করে ঝিকরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। পুতুলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় রেফার্ড করা হয়। সেখান থেকে সকালে ঢাকায় নেওয়ার পথে গোপালগঞ্জে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই মারা যান পুতুল।
তবে পুতুলের স্বামী প্রদীপের দাবি, রাগের মাথায় আত্মহত্যা করেছে পুতুল। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে তিনিও আহত হন।
যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার (নাভারণ সার্কেল) জুয়েল ইমরান বলেন, ‘ঘটনা শুনেই আমরা রাতে ঘটনাস্থলে যায়। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। এ সময় প্রদীপকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মেয়েটি যদি স্বেচ্ছায়ও গায়ে আগুন ধরায়, তারপরও প্রদীপের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিয়ে মামলা হবে। কেন না সে মেয়েটিকে রক্ষা করার কোনও চেষ্টা করেনি।
সুত্রঃ সমকাল
No comments:
Post a Comment