সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাস দ্বিতীয় ধাপে আবারও মহামারী ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সতর্কতামূলক পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন ও মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশাসন মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। তবে সরকার মাস্ক পরিধানে নান্দনিক উদ্যোগ গ্রহন করেছে। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের উদ্বৃতি দিয়ে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে মাস্ক ছাড়া কোন সেবা প্রদান করা যাবে না। একই সাথে ১১ নভেম্বর মঙ্গলবার সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সামনে প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি পালনের নির্দেশও দেয়া হয়েছে। একই ইস্যুতে সোমবার যশোরে ভ্রাম্যমান আদালতও পরিচালিত হয়েছে।নয় নভেম্বর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মন্ত্রী পরিষদ ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ দ্বিতীয় দফায় করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় মাস্ক পরিধানে বাধ্যতামূলককরণে স্থানীয় উদ্যোগ গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মাস্ক ছাড়া কোন প্রকার সেবা প্রদান করা যাবে না। আগামী ১১ নভেম্বর দুপুর বেলা ১২টায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিপণী বিতান, শপিংমল, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থাসহ সকল প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের সামনে “মাস্ক ব্যবহার ছাড়া প্রবেশ নিষেধ” সম্বলিত ব্যানার নিয়ে ১০মিনিট অবস্থান কর্মসূচি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যশোর জেলা, উপজেলাসহ সকল প্রতিষ্ঠানের সামনে এ কমসূচি পালন করার নির্দেশ দেয়া হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
এদিকে মাস্ক ব্যবহারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রশাসন নানানভাবে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সোমবার যশোর শহরতলীর নতুন খয়েরতলায় বিভিন্ন যানবাহনে ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালিত হয়। এতে যানবাহনের কাগজপত্র চেক করা হয়। একই সাথে যান-বাহন চালকদের মাস্ক ব্যবহারের জন্য নির্দেশনাও দেয়া হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা আক্তার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন বলে নিশ্চিত করেছেন পেশকার জালাল উদ্দিন।
মাস্ক নিয়ে জন সাধারণ বলছেন, সবার কাছে মাস্ক নেই। তাই অনেকে পরছেন না। আর যাদের কাছে আছে তারা একটি মাস্ক পরছেন অনেকদিন ধরে। কেউ কেউ কিনতে ও বাকিরা বদল করতে পারছেন না সামর্থ্য না থাকায়। এমনকি হাত ধোয়ার সাবান বা স্যানিটাইজারও সঙ্গে থাকছে না তাদের।
শহরের বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস বিষয়ে চালকদের মধ্যে কিছুটা সচেতনতা তৈরি হলেও তা অপ্রতুল। তবে একটি মাস্ক দিয়েই তারা পার করে ফেলছেন কয়েক সপ্তাহ। যদিও চিকিৎসকের পরামর্শ একবারের বেশি দ্বিতীয়বার একই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত নয়।
তানভীর নামে এক বাস চালক বলেন, তিনি তুলারামপুর এলাকা থেকে প্রতিদিন যশোর শহরে আাসেন বাসের ড্রাইভারি করতে। তিনি জানান, চালকরা খুবই কষ্টে আছে। করোনায় কয়েক মাস বাড়ি বসে থেকে অনেকেই অভাবগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। যার ফলে যে যার মত করে আয় রোজগারে সময় দিচ্ছেন। কিন্তু মাস্ক ব্যবহার এখন তাদের মাথায় নেই। তবে সরকারি যদি কোন বিধি-বিধান থাকে তাহলে অবশ্যই মাস্ক পরবেন বলে মন্তব্য করেন। মশিয়ূর রহমান নামেঅন্য আর এক চালক বলেন, যারা নিয়মিত গাড়ি চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে কিছুটা সচেতনতা এসেছে। তবে ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য তাদের কাছে সাধারণ মাস্ক ছাড়া আর কিছুই নেই। সেটাও বহু ব্যবহৃত। হাত ধোয়ার জন্য সাবান বা স্যানিটাইজারও নেই। তাদেরকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে হয়। সবগুলো স্টপেজে ভালো কোনও ব্যবস্থা রাখা নেই। তবে জেলা বা বিভাগীয় শহরগুলোতে তারা কিছুটা সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছেন। তবে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা যেন শ্রমিকদের যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।
সোমবার সকালে মণিহার এলাকায় কথা হয় রিকসা চালক রসুল হোসেনের (৪৫) সঙ্গে। সে সময় তার মুখ ছিল খালি। পরস্পর কথাও বলছেন কয়েকজন। পথে বের হয়েছেন, সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে তারা মাথা নাড়েন। জানান, তার সঙ্গে সাধারণ মাস্কও নেই।
এদের আর একজন আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, কে আমাদেরকে মাস্ক দেবে? একটা মাস্ক ১০টাকায় দাম। কোথায় পাবো? যার দাম ৩ টাকা। শুধু মাস্ক কি আর করোনা দমাতে পারবে? আল্লাহর ওপর ভরসা করে আছি। যেদিন তিনি মাফ করবেন সেদিন আমরা রক্ষা পাবো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সুত্র; গ্রামের কাগজ
No comments:
Post a Comment