যশোর শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের অযাচিত ব্যয়বৃদ্ধি থামছেই না। নানাভাবে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় বাড়িয়ে চলেছেন শিক্ষাবোর্ড প্রধান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন। এবার একটি মতবিনিময় সভা করে প্রায় লাখ টাকা খরচ করেছেন। এর আগে আইনি পরামর্শের নামে ২ লাখ টাকা ব্যয় করে জবাবদিহিতার মুখে পড়েছেন তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় খুব সম্প্রতি তার কাছে ওই পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ দিয়েছে।জানা গেছে, অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে শিক্ষাবোর্ড। আর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন খাতে ৮৭ হাজার ২৭০ টাকা ব্যয় দেখানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র সাজসজ্জার পেছনেই খরচ করা হয়েছে ৪২ হাজার ২৫৫ টাকা। এছাড়া বাদবাকি টাকা ফুলের ডালি, ক্রেস্ট, ব্যানার, মাইক, ভিআইপি নাস্তা, স্যানিটাইজার, মাস্ক ও উপহার বাবদ ব্যয় করা হয়।
তবে শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের অভিযোগ, একটি মতবিনিময় সভা করে এত বেশি পরিমাণ ব্যয় সম্পূর্ণ অহেতুক। এমনকি ঠিক ওই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে কিনা এটি নিয়েও সংশয় রয়েছে। তাদের দাবি, ভাড়া করা প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে অনেক কম খরচে সাজসজ্জার কাজ সারা হলেও ব্যয় অনেক বেশি দেখানো হয়েছে।
টেলিফোনে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের সাথে আলাপচারিতায় তিনি দাবি করেছেন, একদম তাজা ফুল দিয়ে মতবিনিময় সভার সাজসজ্জা করা হয়। আর বর্তমানে ফুলের বাজার দর অনেক বেশি হওয়ায় খরচ খানিকটা বেশি হয়েছে-যোগ করেন তিনি। তবে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, শিক্ষাবোর্ডের ওই মতবিনিময় সভার যাবতীয় সাজসজ্জার কাজ করে আলমগীর ফুল ঘর। মুঠোফোনে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্তাধিকারী শেখ আলমগীরের সাথে যোগাযোগ করে শিক্ষাবোর্ডের মতবিনিময় সভার আদলে অনুষ্ঠানের সাজসজ্জার ব্যয় নিয়ে আলাপ করা হয়। আলাপচারিতায় আলমগীর জানান, ৩০ হাজার টাকার মত খরচ করলে তিনি ওইরকম একটি অনুষ্ঠানের সাজসজ্জা করে দিতে পারবেন। এমনকি তার কাছ থেকে জানা যায়, শিক্ষাবোর্ডের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত ফুলের সিংহভাগ ছিল প্লাস্টিকের। একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা বলে তার কাছ থেকে এসব তথ্য অনুসন্ধান করা হয়।
এসব ছাড়াও মতবিনিময় সভায় মাইকভাড়া বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩ হাজার টাকা। আর এটিকেও প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের অনেকে একটি অনাবশ্যক ব্যয় বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলছেন, শিক্ষাবোর্ড মিলনায়তনে অনেক কর্মসূচি পালন করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম কেন্দ্র সচিবদের নিয়ে বৈঠক ও মতবিনিময়। এছাড়াও আরো অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় সেখানে। সেক্ষেত্রে বোর্ডের নিজস্ব সাউন্ড সিস্টেম দিয়ে কাজ চলে যায়।
এ ব্যাপারে বোর্ড চেয়ারম্যানের ভাষ্য হলো, মতবিনিময় সভাটি ছিল অনেক বড়। এতে বোর্ডের কর্মরতদের সবাই অংশ নেয়। মিলনায়তনে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেকে বাইরে অবস্থান করেন। আগে থেকে এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে মাইকভাড়া করা হয়।
জানা যায়, সমগ্র অনুষ্ঠানটির আয়োজনে অন্যান্য ব্যয়ের মধ্যে ছিল ভিআইপি নাস্তার জন্য ৮ হাজার ৮৬০ টাকা। ৬৫ পিচ স্যান্ডউইচ, কাজুবাদাম, চকলেট, পানি ও গ্রিন টি বাবদ খরচ ৭ হাজার ২৯৫ টাকা। সামুচা ও বিস্কুটের জন্য ৪ হাজার ৫০০ টাকা। ক্রেস্ট ও ব্যানারের জন্য ৮ হাজার টাকা। ফুলের ডালির জন্য ২ হাজার টাকা ও উপহার হিসেবে পাঞ্জাবি ও নকশি বেড বাবদ ১০ হাজার টাকা।
তবে করোনাকালের এই সংকটে সরকারের তরফ থেকে আপ্যায়নসহ সবক্ষেত্রে অযাচিত ব্যয় কমানোর তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এক মতবিনিময় সভায় প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছি ব্যয় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক রকম সমালোচনাও হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, সেদিন যশোর সদর তিন আসনের সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময়ে মিলিত হন। সেখানে শিক্ষাবোর্ডের সেবা সহজীকরণের নানা দিক তুলে ধরা হয়। বোর্ডে না এসেও অনলাইনে যেসব সেবা পাওয়া যাচ্ছে তার বিভিন্ন দিকের উপর আলোকপাত করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল প্রধান অতিথির মাধ্যমে সরকারের কাছে সেবা আধুনিকীকরণ ও উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দেওয়া। আর প্রতিষ্ঠানের কোন অনুষ্ঠানে সম্মানিত ও বিশেষ ব্যক্তিরা আসলে খরচ স্বাভাবিকভাবে একটু বেশি হয় বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
সুত্রঃ সমাজের কথা
No comments:
Post a Comment