উপশহর এলাকার মিলনের ফ্ল্যাটে অবস্থিত যশোরে স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির যশোর কার্যালয়ে গত ১৫ অক্টোবর থেকে তালা ঝুলছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছেন কর্মকর্তারা। সাইনবোর্ডও নেমে গেছে। অথচ গ্রাহকদের একটি টাকাও ফেরত দেয়নি কর্তৃপক্ষ। চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ নেয়ার কারণে অনেকেই পথে পথে ঘুরছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সূত্র জানায়, যশোর সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের শহিদুলের ছেলে দাউদ হোসেন, আব্দুস সাত্তারের ছেলে হৃদয় হোসেন, মৃত নওয়াব আলীর ছেলে ফারুক হোসেন, আহাদ আলীর ছেলে মুসা আলী, আব্দুস সাত্তারের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, জলিলের মেয়ে রূপালি বেগম, শাহাপুরের মোহাম্মদ আলীর ছেলে মাসুদুর রহমানসহ অসংখ্য গ্রাহকের কাছ থেকে স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি নানা প্রলোভনে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা।
এসব গ্রাহক জানায়, ২০১৪ সালে কোম্পানির চিফ মার্কেটিং অফিসার কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জুগিয়া গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে রাজু আহম্মেদ প্রথম যশোরে অফিস উদ্বোধন করেন। সেসময় তিনি জানান, যশোরের প্রতিটি উপজেলাসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে কোম্পানির কার্যালয় করা হবে। এরপর ঢাকা পুরানা পল্টনের প্রধান কার্যালয় থেকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান সরকার যশোরে এসে বিভিন্ন ধরনের সভা করতে থাকেন। রাজু শহরের মাইকপট্টি এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকেন। এরপর গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। সম্প্রতি রাজু যশোর অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এরপর যশোর অফিসে ইনচার্জ হিসেবে পুরাতন কসবার মোশারেফ খানের ছেলে পারভেজ খানকে নিযুক্ত করে ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তা যশোর অফিসের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। এক পর্যায়ে কোম্পানির প্রতারণা ফাঁস হতে থাকে।
সূত্র জানায়,যশোরে বর্তমানে দেড়শতাধিক গ্রাহক রয়েছেন। যাদের অনেকে বর্তমানে নিঃস্ব হয়ে গেছে। গচ্ছিত টাকা জমা রেখে মাসে মাসে পেনশন পাওয়ার আশায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এখন তারা ঘুরছেন দারে দারে।
সোমবার অফিসে গিয়ে তালাবদ্ধ দেখা যায়। অফিসের সামনে কয়েকজন গ্রাহক বসে ছিলেন টাকা পাওয়ার আশায়।
এ বিষয়ে কথা হয়, কোম্পানীর সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ইনচার্জ পারভেজ খানের সাথে। তিনি জানান,যোগদানের পর তিনি জানতে পারেন স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তারা যশোরের প্রতারণার ফাঁদ পাতে। সম্প্রতি তার নজরে আসে কোম্পানির ১৬ জন কর্মীকে পেনশন দেয়ার কথা বলে ১২ হাজার করে এক লাখ ৯২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। হাউজ লোন দেয়ার কথা বলে তিন জনের কাছ থেকে ৮৫ হাজার, এফডিআরের নামে চারজনের কাছ থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার, সাতজন কর্মীকে নিয়োগের কথা বলে ৭৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্বদেশ। বর্তমানে কর্মীদের বেতন না দিয়ে কর্মকর্তারা যশোর অফিসের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন। তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা টাকা ফেরত দিবেন না বলে জানান। বাধ্য হয়ে তিনি যশোরের আদালতে ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেছেন। যা বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের তদন্তে রয়েছে।
No comments:
Post a Comment