যশোর টাউন হল ময়দানের শতাব্দী বটতলের রওশন আলী মঞ্চে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংবর্ধনা শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এ সংবর্ধনা সভা যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ঘড়ির কাটায় যখন তিনটে বেজে চৌদ্দ মিনিট, নন্দিত জননেতা তখন ময়দানের লাল গালিচায় পদস্পর্শ করেন। শুরু হয় মুহুর্মুহু শ্লোগান-করতালি। তারপর ফুলেল শুভেচ্ছা ও নাগরিক-জনতার হৃদয়ের উষ্ণ আলিঙ্গনে অভিনন্দিত হন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের রাজনীতিক ও প্রতিশ্রুতিশীল এই জনপ্রতিনিধি।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই জনপদের মাটি ও মানুষের প্রতি তার টান ও তৃণমূলের প্রতি কৃতজ্ঞতা-দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করে শাহীন চাকলাদার বলেন, নানা অপপ্রচার ও মিথ্যাচার দীর্ঘদিন জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে আমার নেতৃত্ব দেওয়ার পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যশোরের মানুষ সেটিকে মিথ্যা প্রমাণিত করে আমাকে চিরঋণী করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সেই ঋণ আমি কোনোদিনও শোধ করতে পারব না। বুকে রক্ত থাকা পর্যন্ত আমৃত্যু যশোরের প্রত্যেকটি উপজেলার মানুষের পাশে থাকার জন্য চেষ্টা করে যাব।
যশোর উন্নয়নে দায়িত্বশীল ভূমিকা ও উন্নয়ন কেন্দ্রিক নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করায় গতকাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমপি শাহীন চাকলাদারকে নাগরিক সংবর্ধনা জানানো হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য পর্বে তিনি আরও বলেন, এখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ নাগরিক- মুরব্বিরা ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ; যারা আজ আমাকে সংবর্ধনা জানাতে এসেছেন, তারা সবাই আমার ভাই। আমার অত্যন্ত আপনজন। আর আপনাদের নিজেদের লোক হিসেবে আমি সবার মধ্যে মিশে যেতে চাই।
শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে রাজনৈতিক দর্শন, সেটির বাস্তবায়নে জেলায় আওয়ামী লীগকে সবসময় ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী রেখেছেন শাহীন চাকলাদার। আর যেটি যশোরের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। তার এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নাগরিকদের কাছ থেকে সংবর্ধিত হন তরুণ এই রাজনীতিক।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর দেশে যখন বিভীষিকাময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তখনকার সেই দুঃসময়ে জেলা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শাহীন চাকলাদার। সাহসিকতার সাথে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন ও দলকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ করেছেন।
যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, সংসদে গিয়ে যশোরের মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলবেন শাহীন চাকলাদার। এমনটাই চেয়েছিলেন যশোরের মানুষ। আজ সেটি বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী হয়েছিলাম। আর সেই নির্বাচনে শাহীন চাকলাদারের নেতৃত্বে সেসময় বিজয়ী হয়েছিলাম। ফলে মেয়র হওয়ার পর যশোর শহরের উন্নয়নে আমরা যে ভূমিকা রাখতে পেরেছি, সেটি এখন দৃশ্যমান। সামনের দিনগুলোয় আরও উন্নয়ন হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন যশোর জেলা শাখার সভাপতি ডা. একেএম কামরুল ইসলাম বেনু বলেন, যশোরে দুইবার ডায়রিয়া সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। আর তখন প্রচুর পরিমাণে স্যালাইনের সরবরাহ দিয়ে সংকট মোকাবিলায় শাহীন চাকলাদার বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়া তার সহায়তায় করোনা রোগীদের জন্য ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মোবাইল এক্সেরে ইউনিট গড়ে উঠেছে। এসব ছাড়াও যশোর জেনারেল হাসপাতালের উন্নয়নে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অবদান রেখে চলেছেন তিনি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির জেলা সভাপতি সাকির আলী বলেন, শাহীন চাকলাদার প্রথম যখন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন থেকেই গণমানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন। আজ তিনি এমপি হয়ে সংসদ পর্যন্ত গেছেন। আমরা আশা করি এখন তিনি মানুষের জন্য আরো বেশি কাজ করবেন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যশোর জেলা সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু বলেন, কাদের মোল্লার ফাঁসির জন্য যখন গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে উঠেছিল, তখনকার সেই সময়ে যশোরে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে শাহীন চাকলাদারকে শরীক হতে দেখেছি। চিত্রা মোড়ে গণজাগরণ মঞ্চের সব কর্মসূচিতে এসে তিনি অবস্থান নিতেন, বসে থাকতেন। এছাড়াও যেকোন সংকটে তাকে যশোরের মানুষের পাশে থাকতে দেখা যায়।
পূজা উদ্যাপন পরিষদ যশোর জেলা শাখার সভাপতি অসীম কুন্ডু বলেন, সারা বাংলাদেশে যখন জ্বালাও পোড়াও ও সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা শুরু হয়, তখন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। আমাদের সম্প্রদায়ের উপর হামলাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু শাহীন চাকলাদার যখন দড়াটানায় সমাবেশ করে অপশক্তির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ ও রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন তখন অস্থিরতা সৃষ্টিকারীরা চুপসে যায়।
জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা বানু শিল্পী বলেন, অনেক সম্ভাবনার যশোর; উন্নয়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন অবহেলিত ও বঞ্চিত ছিল। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন শাহীন চাকলাদার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফোরাম যশোর শাখার নেতা ইছালী ইউপি চেয়ারম্যান এসএম আফজাল হোসেন বলেন, ‘অমুক ভাই তমুক ভাই’ উন্নয়নের কারিগর এমন সব কথা শুনতে পাই। কিন্তু এসব উন্নয়ন হলো অদৃশ্য উন্নয়ন। কিন্তু দৃশ্যমান উন্নয়নের জন্য যিনি কাজ করে চলেছেন তিনি হলেন শাহীন চাকলাদার। আর সেই উপলদ্ধির জায়গা থেকে নাগরিক কমিটি তাকে সংবর্ধনা জানাল।
যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি গাজী শহিদুল ইসলাম বলেন, বিরোধী দলে থাকার সময় সরকারের দমন পীড়নের মধ্যে বেড়ে ওঠা নেতা হলেন শাহীন চাকলাদার। তিনি বলেন, শিক্ষকরা যখন কোন সমস্যায় পড়ে তার কাছে ছুটে গেছেন অভিভাবকের মতন করে তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব হারুন অর রশিদ তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, যশোরে একসময় মেডিকেল কলেজ স্থাপন হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু শাহীন চাকলাদারের দৃঢ় ভূমিকার কারণে সেটি রক্ষা পায়। তিনি বলেন, শাহীনের প্রচেষ্টায় যশোর স্টেডিয়ামের উন্নয়নে ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। তার কাছ থেকে আমাদের প্রাপ্তি অনেক।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক গণপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মঈনুদ্দিন মিয়াজী, মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর যশোরের মুজিব বাহিনীর প্রধান আলী হোসেন মনি, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল আলী, যশোর মিনিবাস ও বাস মালিক সমিতির সভাপতি আলী আকবর, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, আইইডিবি’র যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নূরুল ইসলাম প্রমুখ।
নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু করেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা। নৃত্য উপস্থাপনের পাশাপাশি ফুল ছিটিয়ে শাহীন চাকলাদারকে সিক্ত করেন ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন তারা। পৌরসভা পরিচালিত সাংস্কৃতিক সংগঠন ভৈরব নৃত্য প্রর্দশন করে। এরপর সমবেত কণ্ঠে সংগীত পরিবেশর করেন উদীচী ও চাঁদের হাটের শিল্পীরা। পুনশ্চ যশোরের শিল্পীরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন। পাশাপাশি সংগঠনটি জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সংবর্ধনা। এসময় আত্মপ্রত্যয়ী তরুণ রাজনীতিক শাহীন চাকলাদারকে নিয়ে রচিত শ্রদ্ধাপত্র পাঠ করেন বাচিক শিল্পী কাজী শাহেদ নওয়াজ। এর পরে নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব হারুন অর রশিদ কমিটির অন্যদের নিয়ে মানপত্রটি শাহীন চাকলাদারের হাতে তুলে দেন। এছাড়া যশোরের যশ খেঁজুর গাছের প্রতিকৃতি সম্বলিত একটি ক্রেস্ট নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। যৌথভাবে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তির্যক যশোরের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর দাস রতন ও বিবর্তন যশোরের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান রিপন।
No comments:
Post a Comment