প্রটোকলের তোয়াক্কা না করেই যশোরের ঝিকরগাছার সালেহা ক্লিনিকে চিকিৎসার নামে ভয়ঙ্কর কার্যকলাপ চালানো হচ্ছিল। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ আবু শাহীন আকষ্মিক পরিদর্শনে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে ঘটে চলা অবৈধ কার্যক্রম হাতে নাতে ধরে ফেলেন। ওই সময় অ্যানেসথেশিওলজিস্ট ছাড়াই এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন চলছিল। স্বাস্থ্যবিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ অভিযানে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়েছে।সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ আবু শাহীন জানান, ঝিকরগাছার মোবারকপুরের সালেহা ক্লিনিকের লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৭ সালে। নবায়নের জন্যে অনলাইনে আবেদন করায় সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করা হয়। কিন্তু লাইসেন্স নবায়নের জন্যে সুপারিশ প্রতিবেদন দেয়া হয়নি। এরই মধ্যে অভিযোগ আসতে থাকে প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো প্রটোকল না মেনেই চিকিৎসার নামে প্রতারণা করা হয়। সুচিকিৎসা থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকের জীবন ঝুঁকির মধ্যেও ফেলছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্যে মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে ক্লিনিকটিতে আকস্মিক পরিদর্শন করা হয়। সরাসরি অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে দেখা যায় একজন প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন চলছে। সেটি করছিলেন ডাক্তার জেসমিন নাহার পাতা। তাকে সহযোগিতা করছিলেন ক্লিনিক মালিক শরীফ উদ্দিন। অ্যানেসথেশিয়ার কোনো ডাক্তার ছাড়াই ওই প্রসূতির অপারেশন করা হচ্ছিল।
ডাক্তার জেসমিন নাহার পাতার কাছে জানতে চাওয়া হয় অ্যানেসথেশিয়ার ডাক্তার কোথায়। তিনি প্রথমে ক্লিনিক মালিক শরীফ উদ্দিনকেই ডাক্তার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় গভীরভাবে খতিয়ে দেখার এক পর্যায়ে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। এ পর্যায়ে ডাক্তার পাতা দাবি করেন প্রসূতিকে অ্যানেসথেশিয়া দিয়েছেন ডাক্তার দেব প্রসাদ। তাৎক্ষণিক ডাক্তার দেব প্রসাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানা যায় তিনি ঝিকরগাছা উপজেলাতেই নেই। এতেই প্রমাণ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠান মালিক ও অপারেশনকারী ডাক্তারের অবৈধ চিকিৎসা কার্যক্রম।
সিভিল সার্জন আরও জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। একইসাথে রোগীর জীবন নিয়ে তামাশা করার শামিল। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে স্বাস্থ্যবিভাগ ও প্রশাসনের যৌথ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান, আবাসিক মেডিকেল অফিসার রাশিদুল আলম এবং ঝিকরগাছা থানা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত টিম অভিযান পরিচালনা করেন। সালেহা ক্লিনিক সিলগালা করাসহ সেখানে ভর্তি হওয়া চারজনকে রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানান্তর করা হয়। একইসাথে ডাক্তার জেসমিন নাহার পাতা ও ক্লিনিক মালিক শরীফ উদ্দিনকে হেফাজতে নেয় প্রশাসন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রাশিদুল আলম বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে ঝিকরগাছা সালেহা ক্লিনিকে মণিরামপুর উপজেলার বাগডোব গ্রামের ফজলুর রহমানের স্ত্রী সালমা খাতুনকে (২৫) ভর্তির পর ডাক্তার জেসমিন নাহার পাতা সিজারিয়ান অপারেশন করছিলেন। ডাক্তার না হয়েও অ্যানেসথেশিয়ার কাজটি করেন ক্লিনিক মালিক শরীফ উদ্দিন। প্রটোকলের তোয়াক্কা না করেই চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন উদ্যোগ নেয়। ডাক্তার জেসমিন নাহার পাতা ও ক্লিনিক মালিক শরীফ উদ্দিনকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা অপরাধ স্বীকার করেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ করবেন না বলে অঙ্গীকার করেন। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে মুচলেকা দিয়ে তারা মুক্তি পান।
নিউজঃ গ্রামের কাগজ
No comments:
Post a Comment