মশার কামড় থেকে রক্ষা করবে “ফাইটার জেল” - Jashore Tribune

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

a1

Friday, September 4, 2020

মশার কামড় থেকে রক্ষা করবে “ফাইটার জেল”

 


মশার কামড় থেকে রক্ষা করবে ঢাবি’র ছাত্র রাজবাড়ীর রঞ্জু আবিস্কার করা “ফাইটার জেল” –


ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত রোগের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। ছোট মাছি প্রজাতির এই পতঙ্গ কখন কোথা থেকে এসে যে কামড় বসায়! একে নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম অবস্থা নগর সংস্থাগুলোর। রীতিমতো নির্বাচনী ইশতেহারেও স্থান পাচ্ছে মশা নিধনের প্রতিশ্রুতি। আর সুবিধার বাইরে থাকা গ্রামের মানুষও খুব একটা স্বস্তিতে নেই। এমন পরিস্থিতিতে সুখবর দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী এইচ এম রঞ্জু। তাঁর ভাষ্য, তিনি এমন একটি জেল উদ্ভাবন করেছেন, যেটি মশার কামড় থেকে রক্ষা করবে। এটির নাম রাখা হয়েছে ফাইটার জেল। এরই মধ্যে জেলটির নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এতে সহযোগিতা করেছে সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজের ইকাম বিউটি অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রজেক্টের গবেষকদল।


উদ্ভাবক রঞ্জু ঢাবির ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগে অধ্যয়নরত। তাঁর সেশন ২০১৭-১৮। তিনি রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার বড় কলকলিয়া গ্রামের কৃষক আকমল হোসাইনের জ্যেষ্ঠ সন্তান। তাঁর ছোট দুই বোন আছে। মা মঞ্জুয়ারা বেগম একজন গৃহিণী। ফাইটার জেলের উদ্ভাবনের আগে রঞ্জু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্লান্ট তৈরিতে সফলতা দেখান।


গবেষক রঞ্জু রাজবাড়ী বার্তা ডট কমকে জানান, গত অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। প্রাণহানি ঘটে অনেকের। তখন পড়াশোনার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছিলেন রঞ্জু। তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন মা-বাবা। এ নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতার মধ্যে ছিলেন রঞ্জু। মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় খোঁজা শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে করোনা মহামারি শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি বাড়ি ফেরেন। মে মাসে আরো জোরালোভাবে শুরু করেন গবেষণা। কথা বলেন শিক্ষকদের সঙ্গে। তাঁরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রঞ্জুকে উৎসাহ দিতে থাকেন। কয়েক মাসের মাথায় সম্প্রতি তিনি জেল উদ্ভাবনে সক্ষম হন।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রঞ্জু বলছিলেন, তাঁর উদ্ভাবিত ফাইটার জেলটি লেবুর সুগন্ধযুক্ত। এর ব্যবহারে ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। গত জুলাই ও চলতি আগস্ট মাসে সাধারণ ও অতিমাত্রায় অ্যালার্জি থাকা ১০০ নারী-পুরুষের শরীরে জেলটি ব্যবহার করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, এটির ব্যবহারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।


গবেষক জানান, প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক উপাদান দিয়ে ফাইটার জেল তৈরি করা হয়েছে। রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে আছে সোডিয়াম লরেথ সালফেট, ইথাইল ল্যাকটেট, আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল, গ্লিসারিন ও পারফিউম। পাশাপাশি নিমের তেল, লেবু, মেনথল ও লবঙ্গের তেলের মতো প্রাকৃতিক উপাদানও আছে এতে। এ ছাড়া আছে ইনার্ট ইনগ্রেডিয়েন্ট, যা মশার বিরুদ্ধে কার্যকরী। ১০০ মিলি জেল উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।


রঞ্জু বলছিলেন, বহুল ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন ল্যাবে ফাইটার জেলের আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান। সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে রাসায়নিক বিশেষজ্ঞদের। এই জেল বাজারে এলে কয়েল ও মশা নিরোধক স্প্রের সঙ্গে এটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে তাঁর ধারণা। কারণ কয়েল ও স্প্রের স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। জেলটির আরো বিশদ পরীক্ষা এবং বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য সরকারি বা বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।


ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজের কলেজের ইকাম বিউটি অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রজেক্টের লাইন ডিরেক্টর আব্দুস সবুর রাজবাড়ী বার্তা ডট কমকে বলেন, তাঁদের ল্যাবে রঞ্জুর উদ্ভাবিত জেলটির নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা তিনবার পরীক্ষা করা হয়েছে, তিনবারই তা সফল হয়েছে। এই জেলের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। সরকারি অনুমোদন নিয়ে বাজারজাত করা সম্ভব হলে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই উপকৃত হবে।


রঞ্জুর বাবা আকমল হোসাইন রাজবাড়ী বার্তা ডট কমকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই রঞ্জু খুব মেধাবী হিসেবে পরিচিত। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি মানুষের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করে। এখন মশার উপদ্রব শুধু রাজধানী ঢাকায়ই নয়, আমাদের গ্রামেও আছে। রঞ্জু যে জেল তৈরি করেছে, তা আমরাও ব্যবহার করেছি। এটির গুণ থাকা পর্যন্ত মশা কমড়ায় না।’ ভবিষ্যতে রঞ্জু যাতে দেশ ও মানুষের কল্যাণে আরো অবদান রাখতে পারেন, সে জন্য সবার শুভ কামনা চেয়েছেন তিনি।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad