আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৯ জনের মৃত্যু ,দুর্ঘটনার মধ্যে এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। মোট ১২১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১২৯ জন নিহত, যা মোট নিহতের ৩৪.০৩%
গত আগস্ট মাসে সারা দেশে ৩০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৯ জন নিহত ও ৩৬৮ জন আহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে ৬৬ জন নারী এবং ৩২ জন শিশু রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের আগস্ট মাসের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত জুলাই মাসে ২৯৩টি দুর্ঘটনায় ৩৫৬ জন নিহত হয়েছিলেন। এই হিসাবে আগস্ট মাসে দুর্ঘটনা ৩.০৭% এবং প্রাণহানি ৬.৪৬% বেড়েছে।
আগস্টের প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, দুর্ঘটনার মধ্যে এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। মোট ১২১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১২৯ জন নিহত, যা মোট নিহতের ৩৪.০৩%।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪০.০৬%। দুর্ঘটনায় ৮১ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১.৩৭%। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৭ জন, অর্থাৎ ১২.৪০%।
এই সময়ে ১৩টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত, ৩২ জন আহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৬টি পৃথক রেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ জন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
দুর্ঘটনায় বাসযাত্রী ১৬ জন, ট্রাকযাত্রী ৮ জন, পিকআপ যাত্রী ১৫ জন, কাভার্ডভ্যান যাত্রী ৩ জন, মাইক্রোবাস যাত্রী ১৩ জন, প্রাইভেটকার যাত্রী ১৭, ট্রলি যাত্রী ৩ জন, লরি যাত্রী ১ জন, ট্রাক্টর যাত্রী ২ জন, জীপ যাত্রী ১ জন, সিএনজি যাত্রী ১০ জন, ইজিবাইক-অটোরিকশা যাত্রী ৪৬ জন, নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র যাত্রী ২১ জন, রিকশা যাত্রী ৬ জন, লেগুনা যাত্রী ৩ জন এবং বাই-সাইকেল আরোহী ৪ জন নিহত হয়েছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে শিক্ষক ১১ জন, চিত্রশিল্পী ১ জন, পর্বতারোহী ১ জন, পুলিশ সদস্য ১ জন, গ্রাম পুলিশ ১ জন, বিমান বাহিনীর কর্মচারী ১ জন, পল্লী বিদ্যুতে চাকরিজীবি ১ জন, স্কুল প্রহরী ১ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৩ জন, ঔষধ ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ৯ জন, রাজমিস্ত্রী-কাঠমিস্ত্রী ২ জন, মিল শ্রমিক ২ জন, পোশাক শ্রমিক ৮ জন, মাছ-সবজি ও গরু ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ী ২৯ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ২ জন এবং শিক্ষার্থী ৫৮ জন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন ও ঢাকা কলেজের ১ জনসহ)।
এছাড়াও ফরিদপুর সদর উপজেলার এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজ কর্ম এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১১৩টি (৩৭.৪১%) জাতীয় মহাসড়কে, ৯৮টি (৩২.৪৫%) আঞ্চলিক সড়কে, ৫৩টি (১৭.৫৪%) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৮টি (১২.৫৮%) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনাসমূহের ৭৬টি (২৫.১৬%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৮৭টি (২৮.৮০%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৮৩টি (২৭.৪৮%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৪৪টি (১৪.৫৬%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১২টি (৩.৯৭%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২০.৮৯%, ট্রাক্টর-ট্রলি -লরি ৩.৯১%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জীপ ৬.৫২%, যাত্রীবাহী বাস ১৪.১৭%, মোটরসাইকেল ২৩.৬৯%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি -অটোরিকশা-লেগুনা) ১৬.৬০%, নসিমন-পাখিভ্যান-অটোভ্যান- ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র ১০.৬৩%, রিকশা, বাই-সাইকেল ২.৭৯% এবং অন্যান্য (ড্রাম ট্রাক, রোড রোলার, লাটা হাম্বার, কনস্ট্রাকশন মিকচার মেশিন) ০.৭৪%।
দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা ৫৩৬টি। (ট্রাক ৭২, বাস ৭৬, কাভার্ডভ্যান ১৬, পিকআপ ২৪, লরি ৭, ট্রলি ৬, ট্রাক্টর ৮, মাইক্রোবাস ১২, প্রাইভেটকার ১৭, এ্যাম্বুলেন্স ৪, জীপ ২, ড্রাম ট্রাক ১, রোড রোলার ১, লাটা হাম্বার ১, কনস্ট্রাকশন মিকচার মেশিন ১, মোটরসাইকেল ১২৭, বাই-সাইকেল ৪, নসিমন-পাখিভ্যান-অটোভ্যান ২৫, ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র ৩২, ইজিবাইক-সিএনজি- অটোরিকশা-লেগুনা ৮৯ এবং রিকশা ১১টি।
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪.৩০%, সকালে ৩০.১৩%, দুপুরে ২২.১৮%, বিকালে ১৯.৫৩%, সন্ধ্যায় ১০.৯২% এবং রাতে ১২.৯১%।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৭৩টি দুর্ঘটনায় নিহত ৮৪ জন। সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে। ২২টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ জন।
একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৬টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত। সবচেয়ে কম মুন্সিগঞ্জে। ১টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার কিছু কারণও চিহ্নিত করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন, যার মধ্যে রয়েছে- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ১০টি সুপারিশও তুলে ধরেছে তাদের প্রতিবেদনে।
যার মধ্য রয়েছে- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
সংস্থাটি বলছে, গত জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি উভয়ই বেড়েছে।
No comments:
Post a Comment