‘কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি ও সন্তানহীন নারীর জন্য পাত্র চাই’, এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌসকে (৩৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ১০ বছর ধরে পত্রিকায় এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলো জান্নাতুল। এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। অভিযানে তার কাছ থেকে তিনটি পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, ৩টি মেমোরি কার্ড, ৭টি সিল, অসংখ্য সিম ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকার একটি হিসাব বই উদ্ধার করা হয়।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুমিল্লার দেবিদ্বারের মেয়ে জান্নাত এসএসসি পাস না করলেও পোশাক এবং তার কথাবার্তায় স্মার্টনেসের কারণে কানাডা প্রবাসী বলে লোকজনের বিশ্বাস জন্মাতে সমর্থ হয়। অনেকেই তার ফাঁদে পড়ে খুইয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
জান্নাতুল তার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মিলে এই প্রতারণা শুরু করেন। ঢাকা ও এর আশপাশে তার ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে সিআইডি।
সিআইডির কর্মকর্তারা আরো জানান, ‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দেখে নাজির হোসেন নামে এক ব্যক্তি প্রতারক জান্নাতুলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। এক পর্যায়ে গত ১২ জুলাই গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। বিয়ের পর তাকে কানাডায় নিয়ে যাবে এবং সেখানে তার ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা দেখভাল করবেন, জান্নাতুলের এসব কথায় বিশ্বাস করে ভুক্তভোগী প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট দেন। পরে প্রতারক জান্নাতুল জানান, কানাডায় প্রচণ্ড শীত তাই সেখান থেকে তার দুইশ কোটি টাকা দেশে ফেরত নিয়ে আসবেন। পরে দেশেই ব্যবসা করবেন।
তিনি বলেন, ডিএইচএলর মাধ্যমে ওই টাকা ফেরত আনতে ভুক্তভোগী নাজির হোসেনের কাছ থেকে ট্যাক্স ও ডিএইচএল বিল বাবদ মোট ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখেন জান্নাতুল ফেরদৌস। এভাবে ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন জান্নাতুল। তার একটি হিসাবের খাতা জব্দ করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার হিসাব রয়েছে। তার চারটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। সেগুলোতে ১ কোটি টাকা জমা আছে বলে সিআইডি কর্মকর্তারা জানান।
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়ে গেলে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখতো জান্নাতুল। এই চক্রের অপর সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment