যশোর শহর ও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে ওঠা প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর ওপর কঠোর নজরদারি শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তালিকায় রয়েছে জেলার ৩শ’৮৬টি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। নূন্যতম স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ইতোমধ্যে সিলড করা হয়েছে ১৩টি। এছাড়া কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে ৬টি প্রতিষ্ঠানকে।যশোর সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি বিশেষটিম প্রতিদিনই মাঠ চষছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ দিক নির্দেশনায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পাওয়া সরকারি ডাক্তারদের একটি টিম অ্যাকশনে নেমেছে। স¦াস্থ্য সেবার নামে মানুষের সাথে প্রতারণার দোকান খুলে ক্লিনিক হাসপাতাল নাম বসিয়ে দেয়া চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন।
যশোর শহরসহ জেলায় গড়ে ওঠা প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্বাস্থ্য বিধি ও নীতিমালা উপেক্ষা করে চিকিৎসার নামে প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে নড়েচরে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নেই, ওটি নেই, নিয়মিত ডাক্তার, নার্স, প্যাথলজিস্ট, রেডিও টেকনিশিয়ান নেই,- এমনসব প্রতিষ্ঠানে অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যশোর সিভিল সার্জন অফিস। জনসাধারণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিৎ করতে স্বাস্থ্য বিধির উপর গুরত্ব দিয়ে প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর বর্তমান হাল হকিকত অনুসন্ধানে কাজ করছে একটি টিম। অনেক প্রতিষ্ঠানে ভুয়া ডাক্তার বসছে এমন খবরও এসেছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না বসলেও ডাক্তারের নাম লিখে বিভিন্ন ডিগ্রি ঝুলিয়ে রোগী সেবার নামে ব্যবসায় নামা প্রতিষ্ঠানগুলোও নজরদারিতে আছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি নেই অথচ প্রতিদিন রোগী দেখা হচ্ছে। আবার শয্যা খুলে রীতিমত হাসপাতাল চালু করা হয়েছে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতালে সার্বক্ষণিক একজন মেডিকেল অফিসার, ডিপ্লোমা নার্স থাকতে হবে, যা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে নেই। ক্লিনিক হাসপাতাল খুলতে গেলে ফায়ার সার্ভিস, স্যানিটেশন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন থাকতে হবে। প্যাথলজির জন্যে আলাদা নিবন্ধন নিতে হবে, ডিগ্রীধারী পাথলজিস্ট, রেডিও মেশিনসহ সনদধারি রেডিও টেকনিশিয়ান থাকতে হবে। অথচ মাঠ পর্যায়ে নজরদারিতে নেমে এসবের কিছুই খুঁজে পাননি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। যে কারণে জেলার ৩শ’ ৮৬টি প্রাইভেট হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলোকে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র আরও জানিয়েছে, পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে হাওয়ার উপর ভর করে চলছে অনেকগুলো বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যেখানে মানুষের জীবন নিয়ে প্রশ্ন, সেখানে অনেক প্রতিষ্ঠানে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে সেবার নামে প্রতারণা করবে এটা হতে দেয়া যায় না। স্বাস্থ্য বিভাগ এসব দেখেশুনে বসে থাকতে পারে না।
গত সপ্তাহে যশোর শহরের সেন্ট্রাল আধুনিক হাসপাতাল, সততা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কুয়াদা বাজারের মুন হাসপাতাল. মণিরামপুরের মুন হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নিউ প্রগতি সার্জিক্যাল ক্লিনিক, শহরের মুজিব সড়কের ডাক্তার মোসলেম উদ্দিনের মালিকানাধীন ল্যাব এইড হাসপাতাল, যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের দেশ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল এবং স্ক্যান হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চৌগাছার পল্লবী মায়ের দোয়া, কপোতাক্ষ ও বিশ^াস ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিল করেছে স্বাস্থ্যবিভাগ।
এছাড়ার অভিযানিক টিম যশোরে পপুলার ও অসীম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, অ্যাপোলো হাসপাতাল, চৌগাছার নোভা ও মধুমতিকে সতর্ক করেছে। পল্লবী থেকে ভুয়া ডাক্তার জাহিদুরের নামের দু হাজার প্যাড পাওয়া যায়, যা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসময় জাহিদুর পালিয়ে যান।
আমাদের চৌগাছা (যশোর) অফিস জানিয়েছে, রেজিস্ট্রেশন না থাকা ও রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা পার হওয়ায় চৌগাছার ৪টি প্রতিষ্ঠান সিল করা হয়েছে। এছাড়া ২টি ক্লিনিকের ৩ দিনের সময়সীমা বেধে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। অন্যথায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মীর আবু মাউদের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়। সাথে আরও ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চৌগাছা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহারসহ অনেকে।
এ সময় মধুমতি হাসপাতাল, কপোতাক্ষ ক্লিনিক, মায়ের দোয়া ক্লিনিক, বিশ্বাস ডায়গনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করলে প্রতিষ্ঠানের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। ফলে রেজিস্ট্রেশন না থাকা ও রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়। এছাড়া পল্লবী ক্লিনিকের রেজিস্ট্রেশন থাকলেও তা সময়সীমা পার হয়। পরবর্তীতে আবেদন করা হলেও ডিজি থেকে এখনো নবায়নের কাগজপত্র আসেনি। ফলে ৩ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমাদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভর্তি রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নোভা এইড হাসপাতালে রেজিস্ট্রেশনের সময় পার হওয়া ও ডিপ্লোমা নার্স না থাকায় তিন দিনের মধ্যে হাসপাতালের রোগী খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন গ্রামের কাগজকে জানান, স্বাস্থ্যবিধি ও নীতিমালা উপেক্ষা করে চলা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই এখন বেশি। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ মেনে চললে অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বৈধতা নেই। এরপরও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। নিয়মিত খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে, অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অভিযান চালিয়ে সতর্কও করা হচ্ছে। জেলায় আবেদন করা প্রাইভেট স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩শ৮৬টি। সবগুলোই নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সবগুলোতে অভিযান চলবে। যেখানে অসংগতি, স্বাস্থ্যবিধির ব্যত্যয়, সেখানেই অ্যাকশান নেয়া হবে। এ ব্যাপারে অভিযোগ বা তথ্যগত সহায়তাও চান তিনি। যেনো তেনো দোকান ঘর বা খুপড়িতে হাসপাতাল ক্লিনিক চালু করার দিন শেষ।
No comments:
Post a Comment