যশোরে বন্ধ করা অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক চলছে আগের মতোই অভিযান কি আইওয়াশ? - Jashore Tribune

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

as

a1

Saturday, August 22, 2020

যশোরে বন্ধ করা অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক চলছে আগের মতোই অভিযান কি আইওয়াশ?

 

গত ৩ আগস্ট যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডে অবস্থিত ল্যাবজোন স্পেশালাইজড হসপিটাল বন্ধ ঘোষণা করেন সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন। সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পর নারী ক্রিকেটের কোচ সুরাইয়া জান্নাতি তিন্নির (৩০) মৃত্যুর পর আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করেন তিনি। কিন্তু ল্যাবজোনের কার্যক্রম থেমে নেই। গত ১ মাসে ল্যাবজোনের মতো বন্ধ ঘোষণা করা ৩৫ টি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকাংশই চালু রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সঠিকভাবে তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা না থাকা এবং মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে তারা এই সাহস দেখাচ্ছেন। বন্ধ ঘোষণার পরও এসব অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রকাশ্যে কার্যক্রম চলার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। অনেকেই বলছেন অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের নামে চলছে আইওয়াশ। অভিযানকারী টিমের সদস্যরা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করার পরই চালু হয়ে যাচ্ছে। এ যেন যথা পূর্বং তথা পরাং অবস্থা।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগ অভিযান চালিয়ে গত ২১ জুলাই থেকে এই পর্যন্ত যশোর জেলার ৩৫ টি অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করেন। সর্বশেষ ১৯ আগস্ট শার্শা উপজেলার নাভারণের রুবা ক্লিনিকের প্যাথলজিক্যাল কার্যক্রম, বাগআঁচড়ার জনসেবা ক্লিনিকের প্যাথলজি বিভাগ ও নার্সিং হোমের ল্যাব বন্ধের নির্দেশ দেন সিভিল সার্জন। এরআগে বন্ধ হওয়া ৩২ প্রতিষ্ঠান হলো যশোর শহরের যশোর শহরের নওয়াপাড়া রোডের ল্যাবজোন হাসপাতাল, দেশ ক্লিনিকের ডায়াগনস্টিক কার্যক্রম, যশোর ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্ক্যান হসপিটালের ডায়াগনস্টিক কার্যক্রম, ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের সততা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আধুনিক হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক কার্যক্রম, মুজিব সড়কের ল্যাব এইড হাসপাতাল, সদরের বসুন্দিয়ার মহুয়া ক্লিনিক, খাজুরার মাতৃভাষা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফারিহা হাসপাতাল, মণিরামপুর উপজেলার মুন হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (হাসপাতাল মোড় শাখা), নিউ প্রগতি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ,মুন হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (কুয়াদা শাখা), চৌগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ ক্লিনিক, মায়ের দোয়া পাইভেট ক্লিনিক, বিশ্বাস ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পল্লবী ক্লিনিক, আধুনিক ডেন্টাল এন্ড মেডিকেল সার্ভিসেস, মা ডেন্টাল কেয়ার, অভয়নগর উপজেলার স্বপ্নের সেতু ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পপুলার মেডিকেল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আলমদিনা প্রাইভেট হাসপাতাল এনড কম্পিউটারাইজডের ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আরোগ্য সাধনের ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পালস ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবওয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নওয়াপাড়া ক্লিনিকের ডায়াগনস্টিক সেন্টার, লাইফ কেয়ারের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফয়সল ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বর্তমানে এরমধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম চালু রয়েছে। সূত্র জানায়,অভিযানে থাকা সিভিল সার্জন সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি অবৈধ এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর স্থান ত্যাগ করার পরই শুরু করা হয় কার্যক্রম। তবে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ভুয়া ডাক্তার খলিলুর রহমান আটক হওয়ার পর থেকে আর খোলা হয়নি মহুয়া সার্জিক্যাল ক্লিনিক। বুধবার ল্যাবজোন স্পেশালাইজড হসপিটালে গিয়ে দেখা গেছে, পূর্বের মতো চলছে কার্যক্রম। সিভিল সার্জন বন্ধ ঘোষণার পরও চিকিৎসাকার্যক্রম চালু রেখেছেন কেনো প্রশ্ন করা হলে ল্যাবজোনের চেয়ারম্যান শিকদার সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, সিভিল সার্জনের সম্মার্থে কয়েকদিন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিলাম। রোগী মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে। তাই কার্যক্রম শুরু করেছি। লাইসেসেন্সর জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়েছে। সিভিল সার্জন পরিদর্শনের রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরে। এদিন দেশ কিøনিক, স্ক্যান হসপিটালে গিয়ে দেখা গেছে ডায়াগনস্টিক কার্যক্রম প্রকাশ্যে চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভয়নগরে বন্ধ ঘোষণার পর দিন সকাল থেকেই কার্যক্রম শুরু করেছে ল্যাবওয়ভে মেডিকেল সেন্টার, পপুলার মেডিকেল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আল মদিনা প্রাইভেট এন্ড কম্পিউটারাইজড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও স্বপ্নের সেতু ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কার্যক্রম শুরু করেছে। চৌগাছা উপজেলার বন্ধ হওয়া কপোতাক্ষ ক্লিনিক, মায়ের দোয়া পাইভেট ক্লিনিক, আধুনিক ডেন্টাল এন্ড মেডিকেল সার্ভিসেস ও মা ডেন্টাল কেয়ারেও কার্যক্রম থেমে নেই। অভিযোগ উঠেছে, বন্ধ ঘোষণা করা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান অফিস সহকারী পারভীনের সাথে যোগাযোগ করছেন। তার কথামতো অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো চালু রাখা হয়েছে। বিগত দিনে যশোর জেলার অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণ করেছেন পারভীন। তিনি মাসিক চুক্তিতে মাসোয়ারা গ্রহণ করতেন। কিন্তু বর্তমান সিভিল সার্জন আসার পর থেকে সতর্কতার সাথে অবৈধ প্রতিষ্ঠান মালিকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের একজন জানান, চেয়ারে বসে সবাই না জানার ভান করেন। কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগ করেই প্রতিষ্ঠান ফের চালু করেছি। বন্ধ ঘোষণার পরও কার্যক্রম চালু নিয়ে অনেকই মন্তব্য করেছেন অভিযান ও পরিদর্শনে অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার নামে আইওয়াশ করা হচ্ছে। কেনো প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা হচ্ছে, আবার কেনো কার্যক্রম চালু থাকছে এই নিয়েও তাদের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এই বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, অভিযান বা পরিদর্শনে গিয়ে বন্ধ ঘোষণা করা প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম চলছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। তবে কেউ অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম চালু করলে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিভিল সার্জন আরো জানান, কিছু প্রতিষ্ঠান মালিককে ২৩ আগস্টের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন নতুবা নতুন লাইসেন্স গ্রহণ বা অন্যান্য দোষত্রুটির সুযোগ দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ত্রুটি সংশোধনে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিভিল সার্জন জানান, বন্ধ ঘোষণা করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যক্রম চালুর বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন।

নিউজ ঃ স্পন্দন

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad