যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশনের সুপারিশ না করলে বিভাগে করোনা ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছেন এক শিক্ষক।
বিভাগীয় চেয়ারম্যানকে এই হুমকি প্রদান করেছেন জিন প্রকৌশল ও জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হাসান। জিন প্রকৌশল ও জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. জিয়াউল আমিন রেজিস্ট্রার বরাবর এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগটি প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব ড. নাজমুল হাসানকে অবহিতকরণের জন্য চিঠিও দিয়েছেন রেজিস্ট্রার।
রেজিস্ট্রার দপ্তর কর্তৃক ড. নাজমুল হাসানের কাছে প্রেরিত চিঠিতে জানানো হয়, সহযোগী অধ্যাপক পদে পাঁচ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা না থাকায় এবং সংযুক্ত প্রকাশনাসমূহ মানসম্মত না হওয়ায় ড. নাজমুল হাসানকে অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশনের সুপারিশ করা হয়নি। এ ছাড়া ওই শিক্ষক পূর্ববর্তী সময়ের অভিজ্ঞতার সনদ যথাযথভাবে উল্লেখ করেননি বা যে অভিজ্ঞতা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি। এসব বিষয় নিয়ে বিভাগীয় প্লানিং কমিটি করোনাকালীন কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারায় তাঁর বিষয়ে কোনো সুপারিশ করতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে করোনা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হলে আর মিটিং করা সম্ভব না হলে বিভাগে করোনা ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে বিভাগীয় চেয়ারম্যানকে হুমকি প্রদান করেন ড. নাজমুল হাসান।
ড. মো. নাজমুল হাসানের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনা ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার প্রমোশনের জন্য সব নথি প্লানিং কমিটির কাছে পাঠালে বিভাগীয় চেয়ারম্যান অফিস দীর্ঘদিন ধরে তা আটকে রাখে। যেহেতু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে করোনা পরীক্ষণ দলের সঙ্গে কাজ করি, তাই আমাকে যদি বারবার বিভাগীয় অফিসে যাওয়া-আসা করতে হয় তাহলে ডিপার্টমেন্টে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে বারবার তাঁদের অবগত করি। এখন করোনা ছড়িয়ে দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে আমার প্রমোশন আটকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি যদি এমন কিছু করে থাকি তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমার বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগের বিষয় আমাকে অবহিত করা হয়নি।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে জিন প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. জিয়াউল আমিন জানান, আপনাদের কাছে যে ডকুমেন্ট আছে, সেগুলো কাজে লাগিয়ে কাজ করেন, আমি এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারব না।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন জানান, করোনার বিষয়ে তাঁকে নিয়ে কেউ যেন বিতর্কিত করতে না পারে, সে জন্য অনেক আগেই ড. নাজমুল হাসান করোনা পরীক্ষণ দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। আর কারো পক্ষেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে করোনা ছড়ানো সম্ভব না, কারণ জিনোম সেন্টার পুরোপুরিভাবে সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত। আর শিক্ষক নাজমুল পিসিআর ল্যাবে কাজ করেন। জিনোম সেন্টারের পিসিআর আর ভাইরোলোজি ল্যাব সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, ইতিপূর্বে যখন করোনা পরীক্ষা শুরু হয়েছিল, তখনো একদল দুষ্টু লোক কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এমন মিথ্যাচার করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, করোনা পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. নাজমুল হাসানকে আপগ্রেডেশন বোর্ডে সুপারিশ না করায় ইচ্ছাকৃতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি করোনা ছড়িয়ে দিতে পারেন বলে ধারণা করছি। কারণ তিনি করোনা পরীক্ষার সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ে হঠাৎ করে কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হওয়ায় আগামী ২৭ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মোসাব্বির হোসাইন ,যবিপ্রবি প্রতিনিধি
No comments:
Post a Comment