এইচএসসিতে শিক্ষার্থী ভর্তির পরও এ বছর খুলনা বিভাগের দশ জেলার ৫৮৪টি কলেজে অর্ধ লক্ষাধিক আসন শুন্য থাকবে।
যশোর শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, চলতি বছরে যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে দশ জেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এক লাখ ৬০ হাজার ৬৩৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। গত ৩১ মে এ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে যশোর শিক্ষাবোর্ড। এতে মোট পাস করে এক লাখ ৪০ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ছিল ৮৭.৩১ ভাগ। এরপর গত ৯ আগষ্ট থেকে শুরু হয় ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া। প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন কলেজে ভর্তির আবেদন চলে গত ২০ আগষ্ট পর্যন্ত। তবে এ ভর্তি কার্যক্রম খাতা কলমে নয়, অললাইনে চলছে। আবেদনের প্রথম পর্যায়ে ৯ থেকে ১১ আগষ্ট পর্যন্ত ১১ দিনে ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৯৯ জন শিক্ষার্থীর আবেদন জমা পড়েছে। শিক্ষার্থীরা খুলনা বিভাগের দশ জেলার ৫৮৪টি কলেজে অনলাইনে এ আবেদন করেছে।
শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় যশোর শিক্ষাবোর্ডের আওতাধীন ৫৮৪টি সরকারি-বেসরকারি কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে চলতি বছরে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ২ লাখ ৫১৪টি আসন রয়েছে। গত ৩১ মে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ এসব শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও কলেজগুলোতে ৬০ হাজার ২৭১টি আসন শুন্য থাকবে। এছাড়া ভর্তি প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যায়ে বিভাগের ৫৮৪টি কলেজে আবেদন করেছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৯৯ জন শিক্ষার্থী। এ হিসেবে কলেজগুলোতে আবেদনকৃত সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও শুন্য থাকবে ৬৭ হাজার ৩১৫টি আসন। এ পরিস্থিতিতে চিন্তিত হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মফস্বল এলাকার কলেজগুলো। সরকারি কলেজগুলোতে আসন খালি না থাকলেও এর প্রভাব পড়বে গ্রামাঞ্চলের কলেজে। কারণ শিক্ষার্থীরা চাইবে সরকারি বা ভালো মানের নামকরা কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা করতে। সেখানে ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হয়েই তারা বিকল্প কলেজে ভর্তি হয়ে থাকে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একেবারেই পাল্টে গেছে। একাদশ শ্রেণিতে শূন্য থাকছে বিপুল সংখ্যক আসন। তবে কোন কোন কলেজ এ পরিস্থিতির শিকার হবে তা এখনই চিহিৃত করতে পারেনি শিক্ষাবোর্ড।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এসএসসি পাস করার পর অনেক শিক্ষার্থী ঢাকামুখী হয়। তারা রাজধানীর নামকরা কলেজগুলোতে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যত গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করে। যার খানিকটা প্রমাণ এবারো মিলেছে। কারণ হচ্ছে এবারের এসএসসিতে পাস করেছে এক লাখ ৪০ হাজার ২৪৩ জন শিক্ষার্থী। আর প্রথম পর্যায়ে কলেজে ভর্তির আবেদন করেছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৯৯ জন শিক্ষার্থী। এ হিসেবে বাকি সাত হাজার ৪৪ জন শিক্ষার্থী কোথায় গেল। নিশ্চয়ই তারা বিভাগের বাইরে ঢাকা, চট্টগ্রামে চলে গেছে। অথবা কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার কলেজে আবেদন করেছে। এসব কারণে এবার কলেজগুলোতে আসন খালি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদনে এ সংখ্যা বাড়তে পারে বলে শিক্ষকরা মন্তব্য করেছেন।
এদিকে শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০ আগষ্ট পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করা হবে আগামী ২৫ আগস্ট রাত ৮টায়। প্রথম তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ২৬ থেকে ৩০ আগস্টের মধ্যে সিলেকশন নিশ্চয়ন (যে কলেজের তালিকায় নাম আসবে ওই কলেজেই যে শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন তা এসএমএসে নিশ্চিত করা) করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সিলেকশন নিশ্চয়ন না করলে আবেদন বাতিল হবে।
৩১ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদন নেয়া হবে। পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম মাইগ্রেশনের ফলাফল এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে ৪ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায়। ৫-৬ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চয়ন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সিলেকশন নিশ্চয়ন না করলে আবেদন বাতিল হবে। ৭-৮ সেপ্টেম্বর তৃতীয় পর্যায়ের আবেদন নিয়ে পছন্দক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের ফল এবং তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ সেপ্টেম্বর। ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত তৃতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চয়ন করতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে সিলেকশন নিশ্চয়ন না করলে আবেদন বাতিল হবে। ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে কলেজভিত্তিক চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে। আর ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তি হতে হবে বলে আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সিদ্ধান্তে জানিয়েছে। এ ভর্তি কার্যক্রম চলবে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
এসব বিষয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানী জানান, যশোর বোর্ডের আওতাধীন ১০ জেলায় মোট ৫৮৪টি সরকারি-বেসরকারি কলেজ রয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে এসব কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ২ লাখ ৫১৪ টি আসন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের চেয়ে আসন সংখ্যা অনেক বেশি। যে কারণে ভর্তি কার্যক্রমে কোন সমস্যা হবে না।
No comments:
Post a Comment