ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সপ্তায় দুইদিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত বিষয়ে যশোরের ব্যবসায়ীরা বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা এখন নিজেদের উদ্যোগে বাজারে ভীড় কমানোসহ স্বাস্থ্যবিধি মান্য করার উদ্যোগ নিতে চান। এর জন্য তারা মোট পাঁচদিন সময় চেয়েছেন।
ইতিমধ্যে এই বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত যশোর পৌরসভার মেয়র ও প্রেসক্লাব সভাপতির মাধ্যমে ‘করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটি’র সভাপতি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টিতে এনেছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলা প্রশাসক বলছেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা তাদের উদ্দেশ্য না। ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ পর্যবেক্ষণ করা হবে।
আর মেয়র বলছেন, ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবে প্রাথমিক সম্মতি দেওয়া হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ‘করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটি’র সভায় যশোর শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বাই রোটেশন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত তখনই ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়।
এর পরপরই ব্যবসায়ী নেতারা বৈঠকে বসেন। কিন্তু তারা গতকাল কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। গতকালের বৈঠক থেকে আজ বিকেল সাড়ে চারটায় আবার সভায় বসার সিদ্ধান্ত হয়।
আজ নির্ধারিত সময়ে শহরের জেস টাওয়ারে সিটি কেবলের অফিস রুমে ব্যবসায়ী নেতারা বসেন করণীয় ঠিক করতে। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মীর মোশাররফ হোসেন বাবু।
সভা শেষে তিনি জানান, ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সপ্তায় দুইদিন প্রতিষ্ঠান খোলা আর বন্ধ করে রাখার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ফলে ‘করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটি’র সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা কঠিন। ব্যাপক আলোচনা শেষে ব্যবসায়ী নেতারা বিকল্প প্রস্তাব তৈরি করেন।
তাদের প্রস্তাব হলো, ক্রেতা-বিক্রেতাসহ বাজারে আসা মানুষের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতে ব্যবসায়ী সমিতিগুলো নিজেরাই উদ্যোগী হবে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে হ্যান্ডমাইকযোগে নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা হবে। দড়াটানা, চৌরাস্তা, কাঠেরপুলসহ বড়বাজারের প্রবেশ পয়েন্টগুলো দিয়ে রিকশা, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রত্যেক দোকানে স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হবে। ফুটপাতে কোনো হকারকে পসরা নিয়ে বসতে দেওয়া হবে না।
এসব উদ্যোগ নিলে বাজারে জনসমাগম কমে যাবে। এবং সেক্ষেত্রে সপ্তাহের ছয়দিনই দোকান খোলা রাখা হলেও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যাবে।
মীর মোশাররফ হোসেন বাবু বলছেন, এই ব্যবস্থাগুলো কার্যকর করতে প্রস্তুতির জন্য তাদের দুইদিন সময় দরকার। আর ব্যবস্থাটি তারা তিনদিন পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন করতে চান। এতে যদি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে এখন যেভাবে দোকানপাট বিকেল চারটা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে, সেভাবেই চালানো যেতে পারে। আর যদি তারা ব্যর্থ হন, তাহলে করোনা প্রতিরোধ কমিটি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা হবে।
বৃহস্পতিবার সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত করোনা কমিটির সভা থেকে বড়বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার ও প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনকে।
আজ ব্যবসায়ীরা তাদের সভা শেষে আলোচ্য বিষয় ও সিদ্ধান্ত মেয়র ও প্রেসক্লাব সভাপতিকে জানান; যাতে তারা বিষয়টি জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতিকে অবহিত করেন।
সন্ধ্যার পর যোগাযোগ করা হলে প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, ব্যবসায়ী নেতারা তার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করেছেন।
মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, ‘ব্যবসায়ী নেতারা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছি।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী সমিতিগুলো যদি স্বাস্থ্যবিধি ও নিয়মশৃঙ্খলা মানতে সক্ষম হয়, তাহলে তারা করে দেখাক। মানতে পারলে তো ভালো। না হলে করোনা প্রতিরোধ কমিটির পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।’
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আরিফ রাতে বলেন, ‘বাজারে কীভাবে জনসমাগম কমানো যায়, সেটাই হলো আমাদের উদ্দেশ্য। সেই কারণেই রোস্টার ভাগ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। ব্যবসায়ী নেতারা বিকল্প পন্থায় স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করতে তিনদিন সময় চেয়েছেন। আমরা এই সময়কালে বিষয়টি অবজার্ভ করবো। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা তো আমাদের উদ্দেশ্য না।’
No comments:
Post a Comment