মাইকেল মধুসূদন দত্ত। যাকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের মহাকবি। ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি ও নাট্যকার এবং প্রহসন রচনাকার। তাকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্বও বলে গণ্য করা হয়। আজ এই মহান কবির ১৪৮তম প্রয়াণ দিবস।
তিনি ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি অধুনা বাংলাদেশের যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত ও মা প্রথমা পত্নী জাহ্নবী দেবী।
মধুসূদন তেরো বছর বয়সে চলে আসেন কলকাতায়। সেখানে খিদিরপুর স্কুলে পড়ালেখা করেন এবং ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হয়ে বাংলা, ফারসি ও সংস্কৃত ভাষায় শিক্ষা লাভ করেন। এই কবি ১৮৪৩ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি মিশন রো-তে অবস্থিত ওল্ড মিশন চার্চ নামে এক অ্যাংলিক্যান চার্চে গিয়ে তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। তাকে দীক্ষিত করেছিলেন পাদ্রী ডিলট্রি। তিনিই তার ‘মাইকেল’ নামকরণ করেন। মধুসূদন পরিচিত হন ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ নামে।
১৮৪৪ সাল থেকে ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতার বিশব কলেজে অধ্যায়ন করেন। সেখানে তিনি গ্রিক, ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষা শেখেন। তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত পত্রিকা মাদ্রাজ স্পেক্টেটরের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৬২ সালের ৯ জুন ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য তিনি বিলেত যান। ১৮৬৬ সালে তিনি ব্যারিস্টারি পাশ করেন।
মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ নামক মহাকাব্য। তার অন্যান্য গ্রন্থাবলীর মধ্যে দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী (নাটক), পদ্মাবতী (নাটক), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলি, হেকটর বধ’সহ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মাইকেলের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয় এবং বেদনাঘন। তিনি মাত্র ৪৯ বছর বয়সে ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
No comments:
Post a Comment