নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত ঢাকাসহ সারা দেশ। এই সংকটে মানবিক দিক বিবেচনা করে ঢাকার চার বাড়ির মালিক ছাত্রলীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন অপু প্রায় আট লাখ টাকা ভাড়া মওকুফ করেছেন।
বাড়ির মালিক অপু ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের লাগবাগ থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসানের অনুসারী।
অপু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার চারটি বাড়ি থেকে মাসে প্রায় চার লাখ টাকার মতো ভাড়া ওঠে। আমি আপাতত এপ্রিল ও মে মাসের ভাড়া মওকুফ করেছি।’
বাড়িগুলোর মধ্যে কামরাঙ্গীরচরের ছাতি মসজিদ এলাকায় ৪১৯ নম্বর বাড়িতে দুটি ভবনে। একটি পাঁচতলা, আরেকটি চারতলা। দুই বাড়ি থেকে মাসে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকার মতো ভাড়া আসে। আর চকবাজারের ইসলামগঞ্জের ২২/১ নম্বর বাড়ি থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা ভাড়া আসে। মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের মদিনা নগরের ৫ নম্বর এভিনিউয়ের একতলা বাড়ি থেকে ৪৫ হাজার টাকা ভাড়া আসে বলে জানান মোয়াজ্জেম হোসেন অপু।
ভাড়া মওকুফ করার কারণ জানতে চাইলে অপু বলেন, ‘আমি আমার বাবার একমাত্র সন্তান। এক বছর আগে বাবা মারা গেছেন। আমার বাসার ভাড়াটিয়াদের মধ্যে কয়েকজন যোগাযোগ করেছিল, তারা বলেছে এই করোনাভাইরাসের সংকটের মধ্যে সংসার চালাতেই কষ্ট হচ্ছে ভাড়া দেব কীভাবে। তখন আমি দুদিন পরে সব ভাড়াটিয়াকে বলেছি, আপনাদের দুই মাসের ভাড়া আমি নেব না। বাবার কষ্টের করা বাড়ির ভাড়া মওকুফ করলে হয়তো বা বাবার আত্মাও একটু শান্তি পাবে।’
কবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জানতে চাইলে মোয়াজ্জেম হোসেন অপু বলেন, ‘আমি মার্চের মাঝামাঝিতেই একটি মাসের বাড়ির ভাড়া মওকুফ করেছিলাম। তাদের বলেছি ফেব্রয়ারি মাসের অর্ধেক ভাড়া দিতে। আর এপ্রিল ও মে মাসের ভাড়া চারটি বাড়ির মধ্যে কাউকেই দিতে হবে না।’
অপু বলেন, ‘কলাবাগানে একজন বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়াদের মারধ;র করে বের করে দেওয়ার ঘটনার পর আমি ভাবলাম, আমি এতটাকা বাড়ি ভাড়া মওকুফ করেছি অথচ ওনারা ভাড়াটিয়াকে মারধর করে বের করে দেন; এটা তো ঠিক না। তাই সবাই জানুক যে আমি ভাড়া মওকুফ করেছি।’
অপু লালবাগ থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছিলেন ২০১৬ সালে। এর আগে ২০১২ সালে ২৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ থেকেই লন্ডনের একটি এলসিএলএসের মাধ্যমে এলএলবি করছেন।
অপু জানান,যারা ভাড়া বাসায় থাকেন এ সংকটের সময়েও সে পরিবারগুলোর মুখে যেন হাসি থাকে। এ জন্য রাজধানীসহ সারা দেশের বাড়িওয়ালাদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
চকবাজারের ইসলামগঞ্জের ২২/১ নম্বর বাসার ভাড়াটিয়া মো. হারুন মিয়া মসলার ব্যবসা করেন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা বন্ধ থাকায় কোনো আয় ইনকাম নাই। আমার দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার চালাতেই কষ্ট হয়। এর মধ্যে দোকানের চার কর্মচারীর বাসা ভাড়াও আমার দিতে হয়। খুব বিপদে পড়ে বাড়ির মালিক অপু ভাইকে বললে তিনি সবার দুই মাসের ভাড়া মাফ করে দেন। এমন বাড়িওয়ালা পেয়ে আমি গর্বিত।’
No comments:
Post a Comment